বিস্তারিত বিষয়
সিরাজগঞ্জের সলপের ঘোল প্রতিষ্ঠার শত বছর পূর্ণ
সিরাজগঞ্জের সলপের ঐতিহ্যবাহী ঘোল প্রতিষ্ঠার শত বছর পূর্ণ হলো
[ভালুকা ডট কম : ২৪ এপ্রিল]
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপের ঐতিহ্যবাহী ঘোলের প্রতিষ্ঠার শত বছর পূর্ণ হলো। এই ঘোলের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। দেশের সীমানা পেরিয়ে সলপের ঘোল বিদেশেও যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে সলপ রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে বাংলা ১৩২৯ সালের (ইংরেজি ১৯২২) ৭ বৈশাখ এই বিশেষ ঘোল তৈরির সূচনা করেন বেতবাড়ি গ্রামের সাদেক আলী খান। সলপের তদানীন্তন প্রভাবশালী জমিদাররা এই ঘোল তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সাদেক আলী খানের নাতি আব্দুল মালেক তার ছোট ভাই আব্দুল খালেককে সঙ্গে নিয়ে পূর্বসুরিদের হাত ধরে নেমেছেন ঘোলের ব্যবসায়। ধরে রেখেছেন এর প্রাচীন ঐতিহ্য। দু'টি কারখানায় এখন প্রতিদিন তাদের ১৩০ থেকে ১৫০ মণ ঘোল ও মাঠা তৈরি হয়ে থাকে। ৪০ জন কর্মচারী কারখানায় ঘোল, মাঠা, তৈরির কাজ করেন। রমজান মাসে এই ঘোলের চাহিদা প্রতি বছর বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
সলপ ষ্টেশনে ঘোলের দোকানে গেলে প্রয়াত সাদেক আলী খান তার দাদার উদ্ধৃতি দিয়ে এই ঘোলের জন্মলগ্নের কাহিনী শোনান। আব্দুল মালেক জানান, সলপের জমিদারদের অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় তার দাদা বাংলা ১৩২৯ সালে সলপ ষ্টেশনের পাশে গড়ে তোলেন ঘোল তৈরির কারখানা। ওই সময়ে প্রথমে সাদেক আলী রাজশাহীতে একটি মিষ্টির দোকানের এক কারিগরের কাছে ঘোল তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। পরে সলপে ফিরে এসে ৭ বৈশাখ শুরু করেন ঘোল তৈরি। শুরুতে ৮ থেকে ১০ মণ করে ঘোল উৎপাদন করা হতো। প্রতিষ্ঠালগ্নে তাদের উৎপাদিত ঘোলের বেশিরভাগ অংশ কিনে নিতেন সলপ জমিদার পরিবারের লোকজন। জমিদাররা সে সময় এই ঘোল ট্রেনযোগে কলকাতায় তাদের স্বজনদের কাছে নিয়মিত পাঠাতেন।
মালেক জানান, সাদেক আলী খানের মৃত্যুর পর তার চার ছেলে আনছার আলী, আব্দুস সোবহান, আব্দুল মান্নানও তহেজ উদ্দিন ঘোলের ব্যবসায় আসেন। তাদের মৃত্যুর পর আব্দুল মান্নানের ছেলে হিসেবে মালেক ও তার ভাই খালেক ব্যবসার হাল ধরেন। বস্তুত মালেকরাই এখন এই ঘোলের খ্যাতি দেশে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আব্দুল মালেক আরও জানান, সলপের ঘোল এখন এই নামেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় মো. লালন, ঢাকার সাভারে বেলাল হোসেন, কমলাপুরে জায়েদ হোসেন ও আমির হোসেন, গুলশানে আব্দুল লতিফ মিয়া, ঢাকা বিমান বন্দরে আব্দুর রাজ্জাকসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও বেশ কয়েকজন ঘোল ব্যবসায়ী সলপ থেকে পাঠানো ঘোল 'সলপের ঘোল' নামেই বিক্রি করছেন। প্লাস্টিকের বড় পাত্রে করে এসব ঘোল ট্রেনযোগে প্রতিদিন উল্লিখিত স্থানগুলোতে পাঠানো হয়। পাত্রে ওঠানোর পর ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘোল ভালো থাকে। শীতলীকরণের (ফ্রিজিং) মাধ্যমে সলপের ঘোল করোনা অতিমারির আগে এলাকার লোকজন ভারত, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াতে তাদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি আরও ভালো হলে আবারও এই ঘোল দেশের বাইরে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মালেক। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে তারা সলপের ঘোলের খ্যাতি ও ঐতিহ্য অক্ষুণ রাখতে চান। আব্দুল মালেক বিশেষ এই ঘোল তৈরির ব্যাপারে বলেন, দুধ কিনে সসপেনে করে ৭-৮ ঘণ্টা ধরে ভালোভাবে জ্বাল দিতে হয়। এরপর ছোট ছোট বিভিন্ন পাত্রে ঘন দুধ ঢেলে ঠান্ডা হবার জন্য রাতভর রেখে দিতে হয়। পরদিন ভোর থেকে এসব পাত্রে কিছু পরিমান পানি মিশিয়ে বাঁশের তৈরি চড়কি রশির সাহায্যে বিশেষ কৌশলে টেনে ঘোরানো হয়। কখনো একা আবার কখনো দু'জন মিলেও ঘোরানো হয়। কয়েক দফা ঘোরানোর পর তৈরি হয় এই ঘোল। এখন ঘোল তৈরিতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রও তারা ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাজারগুলো ছাড়াও শাহজাদপুর ও মোহনপুরের বিভিন্ন গরুর খামার থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০ মণ দুধ প্রয়োজন হয় তাদের। রমজানে ঘোলের চাহিদা বাড়ায় ২শ' মণ পর্যন্ত দুধ কিনতে হয়। ঘোল বিক্রি করা হয় ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা লিটার দরে। একই সঙ্গে মাঠা (সাদা রঙ্গের ননীযুক্ত উন্নত ঘোল) বিক্রি হয় ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা লিটার। মালেক ও খালেক ছাড়াও সলপ এলাকায় আরও কয়েকজন এই ঘোল বিক্রির কাজে নেমেছেন। সলপে ঘোলের দোকানে গিয়ে দেখা যায় প্লাস্টিকের বোতল ও বড় ক্যান নিয়ে পাশের বেলকুচি, শাহজাদপুর, কামারখন্দ উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার কাশিনাথপুর থেকে অনেক মানুষ ঘোল কিনতে এসেছেন। কথা হয় কাশিনাথপুরের ঘোল ক্রেতা আব্দুস সালামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, সলপের ঘোল খুবই উন্নত। রমজান মাসে তার পরিবারের জন্য অন্তত দেড় মণ ঘোল তিনি ৩-৪ দফায় কিনে নিয়ে যান। ফ্রিজে রেখে তারা এই ঘোল খেয়ে থাকেন। সিরাজগঞ্জের আব্দুস সাত্তার ২৫ কেজি ঘোল কিনেছেন। তিনি বললেন, স্বাদে মানে সলপের ঘোলের এখনও তুলনা নেই। সলপে পঞ্চক্রোশী আলী আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সলপ ষ্টেশনের পাশের বাসিন্দা হাবিবুজ্জামান জানান, শত বছরে পা দিয়েছে সলপের ঘোল। এখনও সুখ্যাতি রয়েছে এই ঘোলের। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে সলপ রেলওয়ে ষ্টেশন চত্বরে ঘোল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সিরাজগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রভাতী সংঘ এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। উৎসবের দিন আব্দুল মালেক ও আব্দুল খালেক দেড় শতাধিক অতিথিকে ঘোল, চিড়া, মুড়ি-মুড়কি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। করোনার কারণে গেল ২ বছর ঘোল উৎসব হয়নি। প্রভাতী সংঘের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ সরকার জানান, এ বছর সলপের ঘোলের একশত বছর পূর্ণ হচ্ছে। এজন্য তাদের ঘোল উৎসবের আয়োজন হবে অনেক বড় আকারের। রমজান মাসের কারণে ঘোলের একশ বছর পূর্তি উৎসব সময়মতো করা সম্ভব হচ্ছে না। ঈদের পরে সুবিধামতো সময়ে এই পূর্তি উৎসবের আয়োজন করা হবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
পাঠক মতামত বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
মানুষ মানুষের জন্য [ প্রকাশকাল : ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৯.০০ পুর্বাহ্ন]
-
সিরাজগঞ্জের সলপের ঘোল প্রতিষ্ঠার শত বছর পূর্ণ [ প্রকাশকাল : ২৪ এপ্রিল ২০২২ ০৬.০৪ অপরাহ্ন]
-
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে পুরুস্কার পেলেন ত্রিশালের রিফাত [ প্রকাশকাল : ২৮ মার্চ ২০২২ ০৫.৪৪ অপরাহ্ন]
-
ত্রিশাল পৌরসভার মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা [ প্রকাশকাল : ০৯ মার্চ ২০২২ ০৬.৪০ অপরাহ্ন]
-
আঁধার ঘরে চাঁদের আলো [ প্রকাশকাল : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮.১১ অপরাহ্ন]
-
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ [ প্রকাশকাল : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭.০০ অপরাহ্ন]
-
পীরের নির্দেশে ২০ বছর জুতা ছাড়া জয়নাল [ প্রকাশকাল : ১৬ নভেম্বর ২০২১ ০৫.০৬ অপরাহ্ন]
-
স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী ও গুনিজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান [ প্রকাশকাল : ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৫.১০ অপরাহ্ন]
-
ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা দায়িত্ব নিলেন ইউপি সদস্য [ প্রকাশকাল : ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
-
রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার মান্নান মিয়া [ প্রকাশকাল : ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৫.৩৭ অপরাহ্ন]
-
শেরে-বাংলা স্মৃতি পদক পেলেন মনপুরার আবদুল বাছেত [ প্রকাশকাল : ২৯ আগস্ট ২০২১ ১২.০৭ অপরাহ্ন]
-
পরকীয়ার অবসান চাচীকে বিয়ে করলেন আওয়ামী লীগ নেতা [ প্রকাশকাল : ২৫ আগস্ট ২০২১ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
-
প্রকাশতি সংবাদরে প্রতবিাদ জানিয়েছেনে ইয়াসনি মজবিুর [ প্রকাশকাল : ১১ আগস্ট ২০২১ ০৪.৪৬ অপরাহ্ন]
-
একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি [ প্রকাশকাল : ০৭ আগস্ট ২০২১ ০৬.২০ অপরাহ্ন]
-
নির্যাতনের শিকার শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন পুলিশ সুপার [ প্রকাশকাল : ৩১ জুলাই ২০২১ ০৮.৩৮ পুর্বাহ্ন]