তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

শ্রীপুরে খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

শ্রীপুরে ৭০ বছরের পুরনো ‘বল খেলা’ খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী ও পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
[ভালুকা ডট কম : ০৭ জুন]
গাজীপুরের শ্রীপুরে বল খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী ও পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। খেলার মাঠ পরিবেশের অংশ-খেলার মাঠ করোনা ধ্বংস, বন সরকারের-জনগন সরকারের-খেলার মাঠ জনগনের। আমরা বনায়ন চাই-কিন্তু, খোলার মাঠে নয়। মঙ্গলবার (৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত  দেড় ঘন্টাব্যাপী তারা শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের পাবুরিয়াচালা গ্রামের ওই মাঠে মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়।

৭০ বছর যাবত ওই মাঠটি শ্রীপুর উপজেলায় “বল খেলার” মাঠ হিসেবে পরিচিত। রবিবার (৫ জুন) মাঠটিতে স্থানীয় বন বিভাগ বনায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বন বিভাগের কর্মীরা তাদের নিরাপত্তার অস্ত্রসহ উপস্থিত থেকে বনায়নের জন্য গাছ রোপণ শুরু করেন। দীর্ঘদিনের খেলার মাঠে বন বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী, স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশের ৫টি গ্রামের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুরনো এ মাঠ রক্ষার দাবিতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, বন মন্ত্রনালয়, পরিবশে ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়, স্থানীয় এমপি এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনিক দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেন, আশেপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ নিয়োমিত খেলা-ধুলা করেন এই মাঠটিতে। বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম এই মাঠ। স্থানীয় পাবুরিয়াচালা, কুড়লপাড়া, দলজোড়, গজারিয়া এবং হালুকাইদ গ্রামের শিশু-কিশোরদের কথা চিন্তা না করে মাঠ নষ্ট করে স্থানীয় বন বিভাগ তাদের বনায়ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। বর্তমানে বনায়নের আংশিক কাজ চলমান রয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলেন, এ অঞ্চলে যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মাঠ আকারে একবারেই ছোট। স্কুলের মাঠে ভবন নির্মাণ করলে মাঠ আর থাকবে না। তারা আরো বলেন, খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকলে আমাদের এবং এলাকার শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।

মাঠের জায়গায় মাঠ চাই, বনের দখলীয় জয়গা উদ্ধার করে বনায়ন চাই। এসব স্লোগানে খেলার মাঠ রক্ষার দাবি তোলেন আশেপাশের পাঁচ গ্রামের বাসিন্দারা। আশেপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ নিয়মিত খেলা-ধুলা করেন বল খেলার মাঠটিতে।

দলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ হাসমত আলী বলেন, গজারি বন অধ্যুষিত এ এলাকাটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আশেপাশের পাঁচ গ্রামের জন্য একটি মাত্র উন্মুক্ত খেলার মাঠ এ “বল খোলা” মাঠ। বনের দখলীয় জায়গা বন বিভাগ উদ্ধার করে সেখানে বনায়ন করার সুযোগ রয়েছে। উন্মুক্ত মাঠে বনায়নের উদ্যোগ এলাকার শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যারা মাঠ রক্ষার জন্য আজ মানববন্ধন করছে তারা কেউই বনায়নের বিপক্ষে না। আমরাও বনায়নের পক্ষে এবং অত্র এলাকার একটি মাত্র খেলার মাঠকে ধ্বংস না করে। আমরা মাঠও চাই, বনায়নও চাই। আমরাও চাই বন বিভাগের বেদখলীয় জায়গা উদ্ধার করে সেখানে বনায়ন বা বৃক্ষ রোপণ করে ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্য গজাড়ি বনের সুনাম ধরে রাখুক।

বাচিক শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী স্থানীয় বাসিন্দা জসীম উদ্দিন বলেন, এলাকায় কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাও প্রয়োজন। বিকেলে একটি সময় খেলাধুলা করতে না পারলে এই যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই যুব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে এ মাঠটিকে রক্ষা করতে হবে। এ মাঠে সারা বছর বিভিন্ন বয়সী লোক এবং শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজেও মাঠটি ব্যবহার করা হয়। এই মাঠ আমরা হারাতে চাই না। ২০০৯ সালে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার একটি খেলায় এ মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা ওমর সানি বলেন, বিশাল এ মাঠে দুটি গোলবারে রাতদিন সবসময় নেট লাগালো থাকে। যেহেতু মাঠটি দীর্ঘদিন যাবত খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে, সেহেতু মাঠের চারদিকে বৃক্ষ রোপণ করে বনায়ন করা হোক। তাহলে মাঠটিও রক্ষা পাবে এবং বন বিভাগের বনায়নের কার্যক্রমে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট থাকবে। পাশাপাশি মাঠটি যেন কারো দখলে না নিতে পারে সে বিষয়ে যা করণীয় তা বাস্তবায়ন করাও বন বিভাগের দায়িত্ব।

পাবুরিয়াচালা গ্রামের বাসিন্দা শ্রীপুর উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন বলেন, মাঠটি বন বিভাগের। তারা বনায়নের জন্য গাছ লাগাতেই পারে। কিন্তু, মাঠটিও আশেপাশের পাঁচ গ্রামের জন্য দরকার। বৃক্ষ বাড়াতে হবে, দখল উচ্ছেদ করুক, বন বিভাগ সে লক্ষ্যে কাজ করুক। এটা আমার প্রত্যাশা। অনেক বছর যাবত ব্যবহার হয়ে আসা মাঠটি হঠাৎ গাছ রোপণ করে দিলে শিশুদের খেলা-ধুলার জায়গাটিও শেষ হয়ে যেতে পারে।

শ্রীপুর উপজেলা নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি সাঈদ চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, পুরো মাঠটি বন বিভাগের। কিন্তু মাঠে কোনো গাছপালা না থাকায় গত ৭০ বছর যাবত মাঠটি “বল খেলার” মাঠ হিসেবে স্থানীয় পাঁচ গ্রামের মানুষ তথা শ্রীপুর উপজেলায় পরিচিতি লাভ করেছে।

রাজেন্দ্রপুর ফরেষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আমিনুর রহমান বলেন, আমরা শুনেছি এ মাঠটি স্থানীয় কয়েকজন ভাড়া দিয়ে পরিচালনা করে আসছে। এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরেজমিন মাঠটি পরিদর্শন করে বনায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই, বন বিভাগের জমি দখলের হাত থেকে রক্ষার্থে এ মাঠে স্থানীয় বন বিভাগ বনায়নের জন্য গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকার বাইরে বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই