তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

থামছে না মাদকের বিস্তার,সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন

নওগাঁয় থামছে না মাদকের বিস্তার,সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা
[ভালুকা ডট কম : ১৪ জুলাই]
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় নতুন করে প্রতিদিনই বিস্তার লাভ করছে মাদকের ভয়াল থাবা। কেউ কেউ মাদক সেবনের অনুমোদন নিয়ে এসে নিজে সেবন করার পাশাপাশি অবৈধভাবে বহনের মাধ্যমে বিক্রি করছে আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে উপজেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন মোড়ে মোড়ে মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে।

বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খুব সহজেই গাঁজা, ফেন্সিডিল, চোলাইমদ, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে অভিভাবকেরা। মাদকের বিস্তার রোধে বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে সচেতনমহল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করলেও, মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহেলা মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের নামমাত্র অভিযানের দীর্ঘমেয়াদী কোন ফল হচ্ছে না বলেও অভিযোগ অনেকেরই।

সম্প্রতি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনায় মাদকের বিস্তার রোধে গ্রামবাসীর পক্ষে প্রদান করা এক অভিযোগের মারফতে জানা গেছে, উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের একটি আদর্শ গ্রাম ত্রিমোহনী। এই গ্রামটি সদর উপজেলার শেষ সীমানায় ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এই গ্রামে প্রায় ৩৫০ঘর লোকের বসবাস। গ্রামের পাশেই রয়েছে ত্রিমোহনী সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। এই গ্রামেই বসবাস করে রণজিত শাখারীর ছেলে রকি শাখারী। সে দীর্ঘদিন যাবত প্রকাশ্যে মাদকের ব্যবসা করে আসছে। তার মাদকের ব্যবসার কারণে অত্র গ্রামের বেশির ভাগ বিশেষ করে অল্প বয়সের ছেলেরা হাতের কাছে সহজলভ্য মাদক পাওয়ার কারণে মাদকাশক্ত হয়ে পড়ছে। তাছাড়া দিনরাত গ্রামে বহিরাগত মাদক সেবনকারীদের আসা-যাওয়া বেড়ে গেছে। যার কারণে প্রতিনিয়তই গ্রামে কোন না কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। গ্রামের পাশেই রাস্তা সংলগ্ন আরেক মাদকের আখড়া ত্রিমোহনী চাউল কল (বয়লার)। রাতের আঁধারে যেখানে প্রতিদিন বসে মাদকসেবীদের আখড়া আর তা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

ইতিপূর্বে রকি শাখারীকে গ্রামবাসীরা মাদকের ব্যবসা বন্ধ করতে বললেই সে সেই সব মানুষদের উপর বিভিন্ন ভাবে হামলা করার পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। রকি শাখারী তার ভাই রনি শাখারী, গাজা ব্যবসায়ী পিতা রণজিত শাখারীদের সহযোগিতায় তার মাদক ব্যবসার বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধি করেই চলেছে। এছাড়াও রকির সঙ্গে ওই গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম, মাইন উদ্দিন, অনীল শাখারীর ছেলে নীল কমল শাখারীসহ আরো অনেকেই মাদকের বিস্তারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। এমন ভাবে চলতে থাকলে বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আগামী প্রজন্মরাও দিন দিন এই মাদকের ভয়াল ছোবলে যেমন আসক্ত হয়ে পড়বে তেমনি এই আদর্শ গ্রামটি মানুষের কাছে মাদকের গ্রাম হিসেবে পরিচিতিও লাভ করবে যার মাশুল দিতে হবে পুরো গ্রামবাসীকে।

শুধু এই গ্রামই নয় নওগাঁ ও বগুড়া জেলার তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকা চকউজির সায়েম উদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমী এলাকা, বাহাদুরপুর গ্রাম এলাকা, পূর্ব বালুভরা (চোরপট্টি), পশ্চিম বালুভরা (ডালপট্টিপাড়া), হাসপাতাল মোড়, পাটগুদাম এলাকা (মেতরপট্টি), রেলগেট এলাকা, কুবরাতলী মোড়, নগরব্রীজ এলাকা, কুজাইল বাজার এলাকা, পূর্বাঞ্চলের ভেটি গ্রাম, বগারবাড়ী বাজার এলাকাসহ আরো অনেক স্থানই বর্তমানে মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অভিভাবকরা বলেন, বর্তমানে মাদকের অতি সহজলভ্যতা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদেরকে নতুন করে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে কিভাবে এই উপজেলায় প্রতিদিন মাদক প্রবেশ করছে তা কি পুলিশ প্রশাসন জানে না। আর যারা এই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাই দলীয় নেতাকর্মী। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়া অভিভাবকদের সব সময়তো সন্তানদের প্রতি নজর রাখাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রথমে মাদকের চলাচলের পথ চিহিৃত করে এর সঙ্গে জড়িতদের দীর্ঘমেয়াদী ও দৃষ্টান্তরমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে তা না হলে এই মাদকের বিস্তারকে কখনোই রোধ করা সম্ভব হবে না।

ত্রিমোহনী চাউল কলের মালিক শেখ হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন আমি বয়লারটি ভাড়া দিয়েছি। যারা ভাড়া নিয়েছে তারা কাজ শেষ করে বিকেলের মধ্যেই চলে যায়। আর এই সুযোগেই হয়তোবা মাদকসেবীরা বয়লারের আশেপাশে থাকা জঙ্গলে গিয়ে মাদক সেবন করে আর বয়লারে আড্ডা দেয়। আর ইদানিং ওই এলাকায় মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের সংখ্যা এতো ভয়ানক ভাবে বেড়ে গেছে তা বলার ভাষা নেই। বয়লারে যাতে আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে আমি সেই বিষয়ে দ্রুতত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

উপজেলার নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলিপ শাখারী বলেন,  আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে ছাত্রদের কে সব সময় মাদক হতে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে এসেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এটা সত্য যে, ত্রিমোহনী গ্রামে মাদকের সহজলভ্যতা আমার ছাত্রদের কে মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা আমার ছাত্রদের কে মাদকের হাত থেকে বাঁচান, তারা না বাঁচলে তো এই জাতি বাঁচবে না।

কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বাবু বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিশেষ করে আমার কাশিমপুর ইউনিয়নের অনেক স্থানে নতুন করে মাদকের বিস্তার লাভ শুরু করেছে। কেউ কেউ মাদক সেবনের লাইসেন্স নিয়ে এসে সেবনের পাশাপাশি মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। তারা দলীয় নেতাকর্মী হওয়ার কারণে কোন কিছু বলাও যায় না। আমি সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি কিন্তু সবার সহযোগিতা ছাড়া আমার একার পক্ষে মাদককে রোধ করা সম্ভব নয়।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমে (গনমাধ্যমকর্মী) এই প্রথম জানলাম। পুলিশ প্রশাসন সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে আগামীতেও থাকবে। নতুন করে যারা মাদকের বিস্তার করছে খুব দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই