তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় ভুর্তকির কৃষিযন্ত্র নিতেও ঘুষ দিতে হয়

নওগাঁয় ভুর্তকির কৃষিযন্ত্র নিতেও ঘুষ দিতে হয়,চলছে স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বজনপ্রীতি
[ভালুকা ডট কম : ২৫ জুলাই]
নওগাঁর রাণীনগর কৃষি অফিসে সরকারের দেওয়া ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্র নিতে ঘুষ দিতে হয়। সরকার যেখানে পুরাতন কৃষি ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ভুর্তকি দিয়ে কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রগুলো আগ্রহী কৃষকদের কাছে পৌছে দিতে বধ্য পরিকর সেখানে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বরাদ্দে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসের কর্মচারীরা।

এমনই ঘটনার ভুক্তভোগী উপজেলার সিংগাড়পাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে আধুনিক কৃষক মোস্তাক আহমদ। তিনি বলেন, কৃষি অফিসে ঘুষ দিয়ে ভুর্তকির কৃষি যন্ত্র নিতে হয় তা আমার জানা ছিলো না। আগেও আমি যন্ত্র পেয়েছি কাউকে এক টাকা দিতে হয়নি কিন্তু এবার আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪০হাজার পরে ২০হাজার টাকা ঘুষের কথা বলেছে কৃষি অফিসের এক কর্মচারী। তিনি আরো বলেন আমি প্রতি বছর নিজস্ব ৩০-৩২বিঘা জমিতে নিজেই ধান চাষ করি। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের আগে আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে সিডার মেশিন ও পাওয়ার থ্রেসার মেশিনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অফিসার আমার নাম তালিকার অনেক নিচে রাখায় আমার ও আমার বাবার নামে কোন বরাদ্দ আসে না। পড়ে বিষয়টি ডিডি মহোদয়কে জানালে তার নির্দেশে আমার নামে একটি সিডার মেশিন আর আমার বাবার নামে একটি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন বরাদ্দের চ’ড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছে মর্মে জানতে পারি।

পরে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে অফিসের এক কর্মচারী আমাকে বলেন যে, উপরমহল থেকে এই মেশিনগুলো বরাদ্দ আনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এছাড়া স্যারকেও (উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) কিছু দিতে হয়। তাই আমাকে নাকি অফিসে কিছু টাকা খরচ দিতে হবে। কিছুদিন পূর্বেই আমি কৃষি অফিস থেকে একটি গার্ডেন টিলার মেশিনও নিয়েছি। সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকরন ও আধুনিকায়ন করতে ভুর্তকিতে প্রতি মৌসুমে কৃষকদের বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র দিচ্ছে আর সেই যন্ত্রগুলো আমাদেরকে কৃষি অফিসে ঘুষের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে। তাহলে কৃষকদের লাভ হচ্ছে কোথায়। আমাকে যদি দুটি যন্ত্র নিতে এতো টাকা দিতে হয় তাহলে অন্যান্য বড় বড় যন্ত্র নিতে এবং প্রতিটি কৃষকদেরকে তাহলে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়। এটি আমাদের মতো কৃষকদের জন্য খুবই দু:খ্যজনক।

আরেক ভুক্তভোগী বেলঘরিয়া গ্রামের মৃত-আফতাব আলীর ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন অনেক কষ্টে আমি কৃষি অফিস থেকে ধান চাষ করার একটি সিডার মেশিনের বরাদ্দ পাই। এই মেশিনের জন্য অফিসের এক কর্মচারী আমার কাছ থেকে ২০হাজার টাকা চেয়েছে। এই বরাদ্দগুলো নিয়ে আসতে নাকি উপরমহলে যোগাযোগ করতে হয়। কিছু খরচও করতে হয় তাই ২০হাজার টাকা খরচ হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু আমি এক টাকাও দিতে পারবো না বলে ওই কর্মচারীকে জানিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের অনেকেই জানান, বর্তমান কৃষি অফিসারের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতিতে পুরো অফিস অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি তার পছন্দ মাফিক লোক দিয়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো বিশেষ করে অর্থনৈতিক কাজগুলো করে নেন। অফিসের অন্যান্য স্টাফ থাকা শর্তেও তিনি তার পছন্দের অবসরপ্রাপ্ত স্টাফ দিয়ে অফিসের বিভিন্ন কাজ করেন যা অফিসের নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এছাড়াও বিভিন্ন কৃষি প্রণোদনা কিংবা বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিজের স্বেচ্ছাচারিতা উল্লেখ্যযোগ্য। বরাদ্দের কৃষি যন্ত্র প্রদানে কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া বর্তমানে এই অফিসের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও অফিসের বিভিন্ন সরকারি উপকরনগুলো নিজের পরিবারের লোক দিয়ে ব্যবহার করে আসছেন। এমন জনগুরুত্বপূর্ন অফিস এমন কৃষি কর্মকর্তা দ্বারা কখনোই সঠিক ভাবে পরিচালিত হতে পারে না বলে তারা মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো সম্পন্ন মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। এই ধরনের বিষয়ে যদি কেউ লিখিত ভাবে জানায় তাহলে অফিসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন কৃষি অফিসের কিছু অনিয়মের বিষয় আমি শুনেছি কিন্তু লিখিত ভাবে কেউ এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ওই অফিসের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই