তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

দূর্নীতি প্রমাণ হলেও বহাল তবিয়তে জাকির

তদন্তে একাধিক দূর্নীতি প্রমাণ হলেও বহাল তবিয়তে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের অফিস সহকারী জাকির
[ভালুকা ডট কম : ২৮ সেপ্টেম্বর]
গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা উঠে আসলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন মো. জাকির হোসেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠে। ভোক্তভোগীরা ওই বিষয়ে পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ বিভিন্নদপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে, ওইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালক(ভারপাপ্ত) হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ ডা. মো. শফিউর এর নির্দেশে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মোবারক হোসেন প্রধান করে গত২৬ জুন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিকে ওইসব বিষয়ে তদন্ত করে পরিচালক( স্বাস্থ্য) ময়মনসিংহ বিভাগ বরাবরে রির্পোট দিতে বলা হয়। পরে, তদন্ত কমিটির তদন্তে মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে দোষী সাব্যস্থ করে ওই কমিটি স্মারক নং ১৬৬২মূলে গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে পরিচালক স্বাস্থ্য ময়মনসিংহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী বরাবরে রির্পোট প্রেরণ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মো. জাকির হোসেনের এক ভাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি ওই তদন্তের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টারত। ফলে, তদন্ত কমিটির রির্পোটে গতি না এসে উল্টো শ্লথ হয়ে পড়ে আছে।

সূত্র জানায়, মো. জাকির হোসেন ময়সনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসে যোগদানের পর থেকে নানান অনিয়ম, দূর্নীতিসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পায় না। নিয়োগ বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে মো. জাকির হোসেন ও মো. মোখলেছুর রহমান নামের অপর একজন সিকিউরিটি গার্ড থেকে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন।

উল্লেখ্য, নিয়োগবিধি মোতাবেক (ক্রমিক নং ৯৩) অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষারিক পদ সিকিউরিটি গার্ড পদোন্নতি মাধ্যমে পূরণ করার সুযোগ নেই। কাজেই, পদোন্নতির তারিখ হতে প্রাপ্ত পদোন্নাতির মেধা, টাইমস্কেল ও বেতনাদি আদায় যোগ্য। তাই স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১০সেপ্টেম্বর তাদেরকে পূর্বের পদে বহাল ও অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নিদের্শ প্রদান করেন। নাইট গার্ড থেকে বিধি লগ্ন করে অবৈধ ভাবে পদোন্নতি লাভ করা অফিস সহকারী মো. জাকির হোসেন জাতির পিতা বঙ্গন্ধুন্ধ শেখ মজিবুর রহমান, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ছবির সাথে নিজের ছবি টাঙ্গিয়ে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে যাচ্ছেন। তিনি সিভিল সার্জনকে ক্লিনিক হাসপাতালের লাইসেন্সে সম্পর্কিত কাজ দেয়ার জন্য চাপ দেন। তাকে লাইসেন্স সম্পর্কিত কাজ না দিলে তিনি সিভিল সার্জনকে বদলী করে দেয়ার হুমকী দেন এবং বলেন, ‘ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান কোড ১১৩০৩৪ সংযুক্ত অধ্যক্ষ(চলতি দায়িত্বে) আই এইচটি, ময়মনসিংহকে সিভিল সার্জন বানিয়ে তিনি ফাইলের কাজ করবেন।

মো. জাকির হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ সঠিক নয়। তিনি ফাইলের কাজ করেন না। আর, চাকরিতে প্রদায়ন তার যোগ্যতা বলেই হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ৮শতাধীক ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছ থেকে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার বিষয়ে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি লিখিত  অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই কমিটি জাকিরকে দোষী সাব্যস্থ করে  স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী বরাবরে প্রেরন করেন । এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অডিট কমিটির নির্দেশ না মানায় অভিযুক্ত জাকির হোসেনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরঈশরদিয়া গ্রামের মৃত হাছেন আলী মন্ডলের ছেলে মো: জাকির হোসেন ১৯৯১সালের ২৫সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। পরবর্তিতে ৯৭ সালের ২৪আগস্ট অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে নিয়ম বর্হিভূতভাবে পদন্নতি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। ওই সময় তিনি বিভিন্ন ঘটনায় ভর্তিকৃত হতাহতদের বিষয়ে ভূয়া ও জাল সনদ (জখমি সার্টিফিকেট) সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। ওইসব ঘটনায় ঢাকার সিআইডি রেশন স্টোরের এসআই শাহাদাৎ হোসেন ও নেত্রকোনা জেলা সিআইডি অফিসার এসআই তাজাম্মোল হক বাদি হয়ে ময়মনসিংহ কতোয়ালী মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। পরে, দু’টি মামলায় সিআইডি তদন্ত করে আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। বর্তমানে মামলা দু’টি আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। এদিকে, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করা মো. জাকির হোসেন নিজ এলাকায় ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের মাছের খামার। নির্মানাধিন বহুতল ভবনসহ নামে বেনামে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। #




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই