তারিখ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় পোল্ট্রি খামারিদের মাথায় হাত

বেশী দামে খাদ্য কিনে কম দামে ডিম বিক্রি
ভালুকায় পোল্ট্রি খামারিদের মাথায় হাত
[ভালুকা ডট কম : ০৯ নভেম্বর]
বেশী দামে মুরগীর খাদ্য কিনে কম দামে ডিম বিক্রি করায় চরম লোকসানে পরেছেন ভালুকা উপজেলার কয়েকশ পোল্ট্রি খামারি। গত দুই দিনে প্রতি ডিমে পাইকারি বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়ে ১ টাকা ৫০ পয়সা কমে ৯ টাকা করে খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন বলে জানাগেছে। ডিমের দাম আরও কমতে পারে এ আশংকায় ভালুকার কয়েকশ পোল্ট্রি খামারি এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। অথচ পূর্বের চেয়ে তারা দ্বিগুন দামে মুরগীর খাদ্য ও ঔষধ কিনে পোল্ট্রি খামার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় আকারের পোল্ট্রি থাকলেও ছোট ও মাঝারি আকারের পোল্ট্রি রয়েছে হাজারের অধিক। এর মধ্যে মল্লিকবাড়ী, উথুরা, হবিরবাড়ী ও ডাকাতিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক প্রান্তিক খামারি রয়েছে। এসব পোল্ট্রি হতে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ডিম ঢাকার তেজগাঁও কারওয়ান বাজারের আরৎ গুলিতে সরবরাহ করা হয়।   

৮ নভেম্বর বুধবার উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া আখালিয়াপাড়া গেলে পোল্ট্রি খামারি ময়নাল হক জানান গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার ১ টাকা লোকসানে প্রতিটি ডিম ৯ টাকা ২৫ পয়সা হিসেবে তারা পাইকারী দামে বিক্রি করেছেন। পোল্ট্রি খাদ্য ও ঔষধ পত্রের বর্তমান চড়া দামের কারনে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে তাদের খরচ হয় সোয়া ১০ টাকার মত। এতদিন তারা প্রতিটি ডিম খামার থেকে ১১ টাকা করে পাইকারী বিক্রি করায় ৭৫ পয়সা মুনাফা পেতেন। অথচ খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে প্রতিটি ডিম সারে ১৩ টাকা হতে ১৫ টাকা পর্যন্ত কোন কোন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। ময়নাল হক জানান ২০০৮ সালে শুরু করা তার খামারে দুটি শেডে ২৪০০ মুরগী রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ১৮০০ মুরগী ডিম দিচ্ছে। তিনি জানান প্রতিটি শেড তৈরী ৩ লাখ ও খাচা ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোয়ালিটি ফিডস এর ৫০ কেজির এক বস্তা মুরগীর খাবার যখন ১৫ থেকে ১৬শ টাকায় ক্রয় করতেন তখন প্রতিটি ডিম ৫ টাকা করে বিক্রি করলেও তাদের খরচ বাদে মুনাফা আসতো। বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা খাদ্যের দাম ২ হাজার ৮৫০ টাকায় ক্রয় করছেন তারা। মুরগীর খাদ্য ও ঔষধের দাম না কমলে কম দামে ডিম বিক্রি করে তাদের প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। এতে শত শত পোল্ট্রি খামারি ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসবে। আঙ্গারগাড়া বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন জানান তার ৫ টি শেডে ৬ হাজার লেয়ার মুরগী রয়েছে। যার ৮০% মুরগী প্রতিদিন ডিম দিয়ে থাকে। প্রতিটি শেড নির্মাণে ৩ লাখ টাকা ও প্রতি শেডে ১ হাজার মুরগীর খাচার মূল্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মত খরচ হয়।

তিনি জানান বর্তমানে ১ দিনের প্রতিটি বাচ্চা ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে কিনতে হয়। একটি লেয়ার বাচ্চা ডিম দেয়ার বয়স পর্যন্ত এক হাজার টাকা খরচ হয়। একটি ডিমের জন্য প্রতিদিন একটি মুরগীর খাবার লাগে ৮ টাকা ৫০ পয়সা, মেডিসিন ১ টাকা, যানবাহন ৫০ পয়সা, শ্রমিক ২৫ পয়সা অর্থাৎ একটি ডিমের উৎপাদন খরচ হয় সোয়া ১০ টাকা। এতদিন তারা প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা করে পাইকারী বিক্রি করেছেন। তিনি জানান ভারত থেকে ডিম আমদানী হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর তারা প্রতি পিস ডিম ৯ টাকা ২৫ পয়সা দরে পাইকারী বিক্রি করেছেন। উৎপাদন খরচ হতে ১ টাকা কমে প্রতি পিস ডিম বিক্রি করায় তারা ব্যপক লোকসানের মুখে পরছেন। ২০০৫ সাল হতে তিনি পোল্ট্রি ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা খাদ্যের দাম ২ হাজার ৮৫০ টাকা যা করোনা কালীন সময়ের পূর্বে ছিলো ১৫ থেকে ১৬শ টাকা। করোনা পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে মুরগীর খাদ্য ও ঔষধের দাম বৃদ্ধি করায় ডিম উৎপাদনে খরচ বেড়ে যায়। মাইক্রোনিড নামে এন্টিবায়োটিক ১ কেজি মুরগীর ঔষধ ২০২০ সালে দাম ছিলো ২৪শ টাকা যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩২শ টাকা। তিনি জানান খাদ্য ও ঔষধের দাম কমানোর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রনে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। অন্যথায় চড়া দামে খাদ্য ও ঔষধ কিনে লোকসানে ডিম বিক্রি করে শত শত পোল্ট্রি টিকিয়ে রাখার মত অবস্থা কারোরই নেই। স্থানীয় বাজারে প্রতি পিস ডিম সারে ১২ টাকা করে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ পূর্বে সারে ১৩ টাকা করে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছে।

ডাকাতিয়া হিজলী পাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন সন্দেশ জানান তার ৪ টি শেডে ৪ হাজার মুরগী ছিলো। খাদ্যের দাম ঔষধের দাম বৃদ্ধির কারনে বার বার লোকসান হওয়ায় তিনি মুরগী বিক্রি করে খামার ব্যবসা ছেড়ে দেন। স্থানীয় পোল্ট্রি খামারিদের দাবী শত শত পোল্ট্রি বাঁচাতে খাদ্য ও ঔষধের মূল্য কমিয়ে ডিমের বাজার ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০০ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই