তারিখ : ০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে খাস ও বনের জমি বিক্রি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা

ভালুকায় ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে খাস ও বনের জমি বিক্রি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা
[ভালুকা ডট কম : ১৯ জুলাই]
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজার বাজেয়াপ্ত (ফরফিটেড) খতিয়ানের খাস ও বনের জমির ৪টি দাগের প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের ১৭৪বিঘা জমির ভুয়া দলিল বানিয়ে সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র দখল ও বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। তিনি এ জমি বিক্রি করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি),সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা,বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা,বিট অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জাল করে ডিমারগেশান ম্যাপ, বিভিন্ন  তদন্ত  রিপোর্ট,খাজনার রশিদ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজের ফিরিস্তি তৈরি করেছেন।
    
জানাযায়, জমিদার সত্যব্রত চাকলাদার হরিববাড়ি মৌজাসহ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় অডেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। ১৯৫০সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদারদের অবশিষ্ট সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত (ফরফিটেড) খতিয়ানে   অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। জমিদারি প্রথা উচ্ছ্বেদ আইনে একজন জমিদার তাঁর ভরনপোষণের জন্য সর্বোচ্চ ৩৭৫বিঘা জমি রাখতে পারতেন। বাকি সম্পত্তি সরকারের কাছে হস্তান্তর করে দিতে হয়েছে। তখন নিজেদের জমি রাখার পর জমিদারগণ প্রজা,বিশ্বাসভাজন কর্মচারী, আত্নীয় স্বজনকে তাদের সম্পতি বিনামূল্য দান করে দিয়ে যান। অবশিষ্ট জমি সরকারের কাছে হস্তান্তর করে দেয়।

সিরাজুল ইসলাম,পিতা আব্দুছ ছোবহান সাং যৌনাটোলা,কেরানীগঞ্জ,জেলা-ঢাকা। সত্যব্রত চাকলাদারের কাছ থেকে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজার ১০৯ খতিয়ানে ৯,৮৭,১১০ ও ১৫৪নং দাগের মোট ১৭৪বিঘা (৫৮একর)  জমি নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত ৩০/০৪/১৯৭০সালে সাফ কাবালা দলিল করেন। ওই দলিল করার পর জমির খাজনা দিতে না পেড়ে ময়মনসিংহ সাব জজ আদালতে রেকর্ড সংশোধনের জন্য গত ০৭/১২/১৯৭২ইং তারিখ একটি মোকদ্দমা করেন বলে দাবি করেন। ওই মোকদ্দমায় তিনি এক তরফা রায় নিয়ে হবিরবাড়ি তহশিল অফিসে তৎকালীন লোকজনদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে একটি খতিয়ান খোলে কিছু দিন খাজনা দেয়। পরবর্তীতে ওই জমি বন ভূমির গেজেটভূক্ত হওয়ায় তহশিল অফিস খাজনা নেয়া বন্ধ করে দেয়। এলাকাবাসী ধারণা,রেকর্ড সংশোধন মোকাদ্দমার যে রায়টি দেখাচ্ছেন সেই রায়ের কপিও জাল।

পরবর্তীতে ২০০০সালে ১৫৪নং দাগটি যৌথভাবে সীমানা নির্ধারণ (ডিমারগেশন) হয়। ওই ডিমারগেশনের সময় রেকর্ডিয় জমির ১৬জন মালিক ২৮.৭০ একর এবং বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ২১জন মালিক ৩৯.৩০একর জমির  কাগজপত্র দেখিয়ে জমির দখল বুঝে পান। রেকর্ডিয় ও বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমির মালিকদের মাঝে সিরাজুল ইসলামের নামে ওই দাগে কোন জমি ডিমারগেশন হয়নি।

১৯৭১সালের স্বাধীনতা যোদ্ধের সময় হানদার বহিনীরা নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিলে ওই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও রেকর্ডপত্র পুড়ে যায়। এরপর থেকে একটি চক্র জেলার বিভিন্ন এলাকার বিতর্কিত জমির সাফ-কবলা দলিল নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম দিয়ে ভূয়া দলিল বানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওই সময়েরই একটি দলিল দিয়ে ভালুকার হবিরবাড়ি মৌজার ৪টি দাগের ১৭৪বিঘা (৫৮একর) জমির একটি দলিল বানিয়ে সিরাজুল ইসলাম তিব্বত ও ওরিয়েট গ্র“পের কাছে বিক্রি করার পায়তারা করছেন। প্রশ্ন হলো ১৯৭০সালের এপ্রিল মাসের ৩০তারিখ সাফ-কবলা দলিল করার পর এত তারাতারি কীভাবে মুল দলিল সিরাজুল ইসলাম পেয়ে গেলেন।

অপর এক সুত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম ভালুকা উপজেলার প্রায় ১হাজার একর জমির ভূয়া কাগজ বানিয়েছেন। যে সব দলিল দিয়ে তিনি ভালুকার ঐসব জমির মালিকানা দাবি করছেন সবগুলি জমির দলিল নান্দাইল সাব রেজিস্ট্রি অফিসের। তার আব্দুছ ছোবহান  এক সময় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি করতেন। সেই সুবাধে তার পিতা এ সব দলিল তার ছেলে নামে তৈরি করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।

সুত্রে জানাযায়,সিরাজুল ইসলাম তার মামলায় আদালতকে জানিয়েছেন সত্যব্রত চাকলাদারের কাছ থেকে জমি ক্রয় করার পর সেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখলে আছেন এবং ওই জমিতে তার একজন কেয়ারটেকার রয়েছে।প্রকৃতপক্ষে আদালতকে দেয়া সিরাজুল ইসলামের ওই তথ্য সঠিক নয় । সরেজমিনে ওই এলাকায় কোথাও তার  ঘর-বাড়ি বা তার নামে কোন সাইনবোর্ডও নেই। স্থানীয়রা জানায় ওই জমিতে তার কোন দখলদারিত্বই নেই। সেখানে রয়েছে বন বিভাগের গাছ-পালা।

বৃহস্পতিবার(১৭জুলাই) হরিববাড়ি ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলাম জমি বিক্রি করা জন্য যে সব কাগজপত্র,খাজনা,জমা খারিজ ও খাজনার রশিদ দেখাচ্ছেন সে গুলির মাঝে শুধু মাত্র তার নামে একটি হোল্ডিং খোলা আছে যার নং ৩৫৫। হোল্ডিং এর নিচে অংশ ছেড়া। যত টুকু আছে লাল কালি দিয়ে ক্রস চিন্হ দেয়া,  শুধু ওপরে লেখা রয়েছে ফরফিটেড খতিয়ান ও বনের জমি। জমিটি বিক্রি করা জন্য সর্বশেষ গত ৩০/০৪/২০১৪ইং তারিখের একটি খাজনা রশিদ তিনি প্রদর্শন করেন। তারও  তথ্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে পাওয়া যায়নি।

ওই জমি তিনি দেশের নামিদামি বিভিন্ন গ্রুপের কাছে বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করার জন্য বেশ কয়েক জন দাললাও ধরেছেন শুধুমাত্র জমিটির দলিল করে দেয়ার জন্য। জমিটি সম্পর্কে ভালুকা সাব রেজিস্ট্রার পূর্ব থেকেই অবগত হওয়ায় তিনি দলিল করতে রাজি হয়ননি। অপর এক সুত্র জানায় দলিলটি করে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারদলীয় এক প্রভাবশালী নেতা সাব-রেজিস্ট্রারকে মোবাইল করেছেন।

নাম প্রকাশে অচ্ছিুক ভালুকা উপজেলা ভূমি অফিসের একজন কর্মচারী জানান,নপি,ও ৯৮/৭২এর আইনে একজন ব্যক্তির ১শত বিঘার ওপরে কোন ব্যক্তির জমি থাকতে পারবে না। এ ছাড়াও ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এ মর্মে অধ্যাদেশ জারি করেন ১ব্যক্তির নামে ৬০বিঘার উপরে জমি থাকতে পারবেনা। সিরাজুল ইসলাম কীভাবে শুধু ভালুকাতেই একটি খাতিয়ানে ১৭৪বিঘা জমির মালিকানা দাবি করেছেন।

ভালুকা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন,“হবিরবাড়ির  মৌজার ১৫৪নং দাগ সম্পর্কে  আমি অবগত, দাগটিতে বনে দাবি রয়েছে। যদি কেউ জমি কবলা করতে আসে তাহলে জমি কাগজপত্র যাঁচাই বাছাই করার জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠায়ে দিব তাঁরা যদি কাগজপত্র সঠিক বলে প্রত্যয়ন তখন দলিল করা হবে”।

হবিরবাড়ি বিট অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন,“সিরাজুল ইসলাম ২০১৩সালের একটি ডিমারগেশান দিয়ে ভুমি অফিসে খাজনা দিয়েছেন। তার দলিলের ৪টি দাগের মাঝে কোনোটিতে অংশিক আবার কোনোটি সবটুকুই বনে দাবি রয়েছে। তিনি যদি প্রকৃত পক্ষে জমির মালিকই হয়ে থাকেন তাহলে সরেজমিনে গিয়ে তার জমি আমাদেরকে দেখিয়ে দিক এ অংশটুকু তার। দূর থেকে শুধু কথা বললেই তো হয় না”।

হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন,“এ অফিসে সিরাজুল ইসলামের নামে একটি হোল্ডিং খোলা আছে। তবে ওই হোল্ডিংয়ে খাজনা দেয়ার কোন প্রমাণ নেই। হোল্ডিং এর উপরে লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেয়া রয়েছে। এটি ফরফিটেড খতিয়ানের জমি”।

সিরাজুল ইসলামকে বেশ কয়েক দফা ফোন করেও হলে তিনি ফোন রিসির্ভ করেননি। পরে তার সহকারী মামুনের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান,আমাদের কাগজপত্র সঠিক। স্থানীয় কোন কিছু লোকজন আমাদের জমিতে যেতে দিচেছ না। তাদের জমির জন্য গত ৩০এপ্রিল/১৪ হবিরবাড়ি তহশিল অফিসে কথিত খাজনার জমা দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি পরে কথা বলবো বলে তড়িগড়ি করে ফোন কেটে দেয়।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই