তারিখ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

স্বর্না জাতের আমন ধান ক্ষেতে পোকার ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

স্বর্না জাতের আমন ধান ক্ষেতে পোকার ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা কৃষক
[ভালুকা ডট কম : ১৯ অক্টোবর]
স্বর্না জাতের আমন ক্ষেতে পোকার ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নীলফামারীর কৃষকরা। লেট ভ্যারাইটি হিসাবে পরিচিত ১২৫ দিনে এই ধান কৃষকদের ঘরে উঠার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই কারেন্ট, মাজরা পোকা ও খোলপোড়া রোগে  ধান গাছ বিবর্ণ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে পোকার আক্রমনে  কৃষি বিভাগের সহযোগীতা  পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

জেলা সদরের সোনারায় ইউনিয়নের বেড়াকুঠি ৪ নম্বর ওয়াডের কৃষক মনির উদ্দিন জানান তিনি এবার স্বর্নাজাতের আমন ধান ৫ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। এর মধ্যে দুই ্িঘা জমির ধানে  কারেন্ট পোকা ও  মাজরা পোকা আক্রমন করেছে। তিনি বলে কারেন্ট পোকা ধান গাছের গোড়ার রস চুষে খাচ্ছে এতে ধান গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে একই ক্ষেতে মাজরা পোকা ধান গাছের উপরে ধানের থোর ও পাতা গুলো কালো করে  ফেলছে। যা দেখলে মনে হবে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও কোন সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই নিজেরাই বাজারের কীটনাশক দিয়েও পোকার আক্রমণ ও বিভিন্ন ধরনের রোগ ঠেকানো চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে। একই এলাকার আজগার আলী বলেন তিনি ৭ বিঘা জমিতে স্বর্নাজাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। তারও ৩ বিঘা জমিতে পোকার আক্রমনে ধান ক্ষেত কালো হয়ে গেছে। কৃষক দুলাল জানান তার ৪ বিঘা স্বর্না ধানেরর একই অবস্থা।এখন এসব ক্ষেতে ধান পাওয়ার  সম্ভাবনা ক্ষীণ। সদর উপজেলার পালপাড়া,জয়চন্ডী,কুখাপাড়া,জাকীরগঞ্জ ,উত্তরএলাকার শতশত কৃষকদের একই অবস্থা।

জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক আমিনুর মিয়া জানান তিনি গত বছর স্বর্ণা জাতের আমন আবাদ করে বিঘা প্রতি ২৫ মন করে ধান পেয়েছিলেন। এবার তিনি ৬ বিঘা জমিতে এই ধান আবাদ করে এবার লোকসান গুনছেন। তার ৬ বিঘা জমির ধানই কারেন্ট ও মাজরা পোকার আক্রমন নষ্ট হতে বসেছে। গদা গ্রামের মৃত নুর ইসলামের বিধবা স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি জমিতে আবাদ করে আসছেন। সংসারের পুরো হাল তারই হাতে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পর পর ৪ বার ক্ষেতে কীটনাশক দেয়া হয়। এরপরেও ৩ বিঘা জমিতে স্বর্নাজাতের ধান আবাদ করে ২ বিঘা জমির ধান পোকার আক্রমনে বিনষ্ট হতে বসেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার ( উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা) দের পাওয়া যায়না। তিনজন ব্লক সুপারভাইজার সরকারি চাকুরী করলেও তারা নিজেরা কিশোরীগঞ্জ বাজারে কীটনাশনের দোকান দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে কীটনাশক এনেও ধান ক্ষেতের পোকা দুর করা যায়নি।

এই উপজেলার বাহাগিলি পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক খয়রাত হোসেন জানান তার ৩ বিঘা জমির স্বর্না ধান পোকায় খেয়ে ফেলেছে। জেলার ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার বিক্ষিপ্ত এলাকায় স্বর্ণা ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমনে কথা জানায় কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবার নীলফামারীর  ৬টি উপজেলায় আমনের চাষ হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। বন্যায় ৫শত হেক্টরের ধান সম্পূর্ন নষ্ট হয়।  এর মধ্যে স্বর্না, বিআর-১১, ব্রি-৩৩সহ ৪৩ জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৭২৪ হেক্টরে । যার মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির স্বর্না ধান ওই পোকার আক্রমনে শিকার। এ পরিস্থি'তিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখাই মিলছেনা বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান সোনারায় ইউনিয়নের মাজরা বা কারেন্ট পোকার আক্রমনের বিষয়টি ঠিক নয়। সেখানে খোলপোড়া রোগ দেখা গেছে। এতে উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন এই জাতের ধানটি বাংলাদেশের অনুমতি যোগ্য নয়। ভারতের বীজ । এটিতে উৎপাদন বেশী হয় বলে কৃষকরা এই ধানের ঝুকে পড়ে। তবে খোলপোড়া রোগ তাড়াতে কৃষককের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা  রেজাউল ইসলাম বলেন কিছু এলাকায় পোকার আক্রমন ছিল এখন নেই।
 
কৃষি সমপ্রারনের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ আলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন বিষয়টি জেনেছি। জানার পর রংপুরের ধান গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সহিদুল ইসলাম কে গত বৃহস্পতিবার নীলফামারী নিয়ে এসে আক্রান্ত ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি পরীক্ষা নিরিাক্ষা করে জানান   এটি কারেন্ট, মাজরা পোকা ও খোলপোড়া রোগ নয়। এটিকে টুংরো রোগ । যা বিশেষ করে স্বর্ণা ধানের ক্ষতি করেন। তিনিও স্বর্না ধান বাংলাদেশের কৃষি বিভাগের অনুমতিযোগ্য নয় বলে জানান। তাই এই ধান আবাদের পরিবর্তে অন্যজাত আবাদের জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। #




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই