তারিখ : ০১ মে ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় অবসরপ্রাপ্ত পিআইও কর্তৃক নিরিহ কৃষকদের জমি জবর দখলের অভিযোগ

ভালুকায় অবসরপ্রাপ্ত পিআইও কর্তৃক  নিরিহ কৃষকদের জমি জবর দখলের অভিযোগ
[ভালুকা ডট কম : ০২ ডিসেম্বর]
ভালুকা উপজেলার আংগারগাড়া মৌজার ৩৭৫ দাগের সরকারের ১৫ একর অর্পিত সম্পত্তি, ৯৫ শতাংশ বন বিজ্ঞপ্তিত জমি। ওই দাগের দখলিয় সব মালিকদের না জানিয়ে গোপনে ত্রুটিপূর্ণ ডিমারগেশনের মাধ্যমে এবং প্রকৃত মালিকদের ভোগদখলে থাকা জমি অন্যের কাছ থেকে দলিল করে প্রতিবন্ধি সহ নিরিহ কৃষকদের জমি অবসর প্রাপ্ত পিআইও এস,এম ওমর আলী ওরফে উমর পিআইও নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জবর দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ত্রুটিপূর্ণ ডিমারগেশন বাতিল ও  জবর দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবিতে গত রবিবার সকালে উপজেলার আঙ্গারগাড়ায় ভালুকা-সখিপুর সড়কে মানব বন্ধন করেছে কয়েক শত নারী,পুরুষ, শিশু ও প্রতিবন্ধি সহ ভোক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে গেলে আমিনুল ইসলাম সহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওমর পিআইও ও ওই মৌজা এবং দাগের ৯জনের নামে ডিমারগেশন ও খারিজ করানোর পর ৭দশমিক ৯১একর জমি দলিল করে নিয়েছেন। ক্রয় করা জমির মূল্য ১কোটি ৫৮লাখ টাকা। কিন্ত কাটাতারের বেড়ার মধ্যে জমি রয়েছে অনেক বেশি। যা সরকারী সার্ভেয়ার দিয়ে মাপলে জমি সঠিক পরিমাণ বের হয়ে আসবে। সোনা মিয়া,ওমেদ আলী,ফালু মিয়া, সন্দেশ মিয়া,জামাল হোসেন,হাছান আলী ও সেকান্দর আলীরা ৪ভাই সহ প্রতিবন্ধিসহ  অসহায় নিরিহ জমির একাধিক মালিকের অভিযোগ। তাদের ভোগ দখলিয় জমি তারা কৌশলে জোরপূর্বক কাঁটাতারের জোরপূর্বক বেড়া নির্মাণ করে জবর দখল করে নিয়েছেন পিআইও ওমর আলী ।

 তার এ সব ঘটনার কেউ  প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানা ভাবে হুকমি দেয়। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেন। তিনি বর্তমান সরকার দলিয় লোক হওয়ায় সারধাণ মানুষ তার লোকজনের সামনে কথা বলতে সাহস পায়না। জমি দখলের ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় গত ১৭ নভেম্বর ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছামাদকে ডিবি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আনোয়ার হোসেন তাকে ডিবি পুলিশের কাছ থেকে ছড়িয়ে আনেন। ধরানোর বিষয়টি পিআইও অস্বীকার করেন।

পিআইওর ৯জন দাতার মধ্যে আবু হানিফ সরকার ওরফে হানিফ ভেন্ডার ও সুলতান মামুদ অন্যতম। হানিফ ভেন্ডার ১৯৯৭সালে তিনজন মালিকের কাছ থেকে ওই দাগের ২একর ৪০শতক জমির দলিল নেন। অথচ ওই দলিল দাতাদের এই জমিতে কোন অস্তিত্বই ছিল না। একই বছর তিনি ভাগিনা হিসাবে টাঙ্গাইল রামপুর এলাকার ওমেদ আলীর দানপত্র দলিল মূলে ওই দাগের আরো ১.৫০একর জমির মালিকানা দাবি করে চলতি বছর ওই জমি ওমর আলীর নামে দলিল করে দেন। এদিকে বৃদ্ধ ওমেদ আলীর উত্তরাধিকারদের দাবি,ওমেদ আলীর কোন বোন ছিল না। হানিফ ভাগনে হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা ? এমনকি সে তাদের কোন আত্মীয়ও না। ওই জমি তিনি তাকে দলিল করে দেননি। ওই দলিল বাতিলের জন্য তিনি আদালতের একটি মামলা করেছেন যার নং ১১৪/২০১৪। এ বিষয়ে হনিফ ভেন্ডার।বলেন ওমর পিআইওর কাছে  ১ একর ৮০শতাংশ জমি ২৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। তিনি মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে টালবাহানা করছে। ওই দাগে আমি সাড়ে ৪ একর জমি কিনেছি কিন্তু ওই জমিতে দখল ছিলনা। বর্তমান জরিপে  মাত্র ৩৫শতাংশ জমি আমার নামে রেকর্ড হয়েছে।  

অপরদিকে, সুলতান মামুদের দলিল পর্যালোচনা করে জানাযায়, ১৯৮৫ ও ৮৬সালে আবদুর রহমান ও জেলেমনের কাছ থেকে সুলতান মামুদ  দু’টি দলিলে ১একর ১৪শতক জমি রেজিস্ট্রি করেন। ওই দলিল তার জমি সঠিক রয়েছে মাত্র ৩৬শতাংশ। চলতি বছর সুলতান মামুদের কাছ থেকে ওমর আলী পিআইও ১একর১শতাংশ জমির দলিল করে নেন।
আংগারগাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ ফালু মিয়া জানান, ওমর আলী পিআইওর দেয়া কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর তার অবিক্রিত আরও ২৪.৫শতাংশ জমি রয়েছে। জমিটি আমার নামে নতুন মাঠ পর্চা হয়েছে। ওই জমিতে আমার কাঁঠাল বাগান ছিল। ওই বাগানের কাঁঠাল বিক্রি করা ও শারীরিক প্রতিবন্ধি হিসাবে সরকারের দেয়া সামান্য ভাতার টাকায় কোন মতে চলে আমার সংসার।

একই গ্রামের জামাল হোসেন, সোনা মিয়া ও সন্দেশ আলী জানান, ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়ে ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় আমাদের নামে নামজারি জমা খারিজ রয়েছে। আমাদের ২একর ৪৭শতাংশ জমির চারদিকে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ওমর আলী পিআইওর লোকেরা।

এ জন্যে সোনা মিয়া ও সন্দেশ আলী বাদী হয়ে এসএম উমর আলী গংদের আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে দু’টি মামলা (নং ৩৩১/২০১৪ ও ৩৩২/২০১৪) দায়ের করেছেন। এছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ ডিমারগেশন বাতিল চেয়ে  ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে এলাকার ২৫জন নিরিহ কৃষক মামলা(নং ১২০/২০১৪) দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে এসএম ওমর আলী পিআইও জানান, ওই দাগের জমিতে বনের দাবি থাকায় জমির খাজনা-খারিজ, ক্রয়-বিক্রয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমিনুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জমির ডিমারগেশন করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ডিমারকেশনের পর খাজনা-খারিজ করা প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করে ওই জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। অন্যের জমি জবর দখলের প্রশ্নই আসে না। ওই সময় জমির মালিকানা দাবির পক্ষে যারা সঠিক কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন, তারাই জমির ডিমারগেশন পেয়েছেন। মোট ৯জনের প্রকৃত জমির মালিকদের কাছ থেকে আমি আমার স্ত্রী হোসনে আরা ও আমার ভাই আবুল বাশারের নামে ৭.৯১একর জমি সাব কবলা দলিল মূলে ক্রয় করেছি। স্থানীয় কিছু লোক অন্যায়ভাবে ওই দাগের জমির মালিকানা দাবি করে সমস্যার সৃষ্টি করছে। এ জমি কেনার পর একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল বারেক জানান, ওই দাগে ভোগ দখলে থাকা ও সঠিক কাগজপত্রধারী জমির বেশ কয়েকজন প্রকৃত মালিক ডিমারগেশনের সময় বাদ পড়েছেন। ডাকাতিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুস ছালাম জানান, আমি অত্র অফিসে যোগদান করার আগেই ওই দাগের জমির ডিমারগেশন হয়েছে। ওই ডিমারগেশনে কিছু ত্রুটি রয়েছে। কয়েকজন প্রকৃত জমির মালিক ডিমারগেশন থেকে বাদ পড়েছেন।

ডাকাতিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম মাস্টার জানান,এ ব্যাপারে ইউনয়ন পরিষদে দুই দফা শালিস দরবার হওয়ার কারনে বিষয়টি তারা জানেন এবং তাদের জানামতে, ডিমারগেশন থেকে বাদ পড়া ওই জমির দাবিদারদের দাবি সঠিক একই কথা বলেন ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতিকুজ্জামান লস্কর ।

এ ব্যাপার ভালুকা উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) তরফদার সোহেল রহমান বলেন,আমি আসার পূর্বে এ জমি ডিমারগেশন হয়েছে। শুনেছি কয়েক জন জমির মালিক ডিমারগেশন থেকে বাদ পড়েছে। ডিমারগেশনের অন্তর্ভূক্ত হতে চাইলে বাদপড়া জমির মালিকগণ বিভাগিয় কমিশনার বরাবর পূনঃরায় ডিমারগেশনের জন্য আবেদন করতে হবে।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই