তারিখ : ০১ মে ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আজ ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস
[ভালুকা ডট কম : ০৮ ডিসেম্বর]
আজ মঙ্গলবার ০৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফছার বাহিনীর কাছে এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনার আত্মসর্মপনের মধ্য দিয়ে ভালুকা মুক্ত হয়।

সেদিনের কুয়াশার চাদর ঘেড়া ভোরে প্রচন্ড গোলা গুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ভালুকার মুক্তিকামী জনতার। মেজর আফছার বাহিনীর মুক্তি সেনাদের আক্রমনের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা সূর্য উঠার আগেই ভালুকা ক্যাম্প ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গফরগাওয়ের উদ্যেশ্যে সড়ক পথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। অনেক রাজাকার অস্ত্র ফেলে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে গেলেও বেশীরভাগ আত্মসর্মপন করতে বাধ্য হয়। পরে এদেরকে ভালুকায় ফিরিয়ে আনা হয়। ভোরের আলো ফুটতেই জয়বাংলা ধ্বনি তুলে গ্রাম থেকে দলে দলে লোক জমা হতে থাকে হানাদার মুক্ত ভালুকা সদরে। আটককৃত রাজকারদের প্রতি ঘৃনা ও ধিক্কার জানায় স্বাধীন ভালুকার সর্বস্তরের মানুষ।

১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৭১ এর ১৭ এপ্রিল’  বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফছার উদ্দীন ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে মল্লিকবাড়ী বাজারে খেলু ফকিরের বাড়ীতে গোপনে মুক্তি বাহিনীর দল গঠন করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি ও প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ থেকে ক্ষীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে। পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষন সহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলা বারুদ নিয়ে আশার পর এটি একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত ।

আফছার উদ্দীনের ৮ সদস্যের দলটি  সারে ৪ হাজারে উন্নীত হয়ে  এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ  সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফছার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলীর তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে আফছার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে একটি গোপন ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর্ন্তজাতিক রেডক্রস সংস্থার সহায়তায় এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ভালুকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

৭১ এর ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আফছার বাহিনীর একটানা যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তরুন মুক্তিযোদ্ধা অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আব্দুল মান্নান শহীদ হন। আহত হয় ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিক হতে একটানা দুদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায়  শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পর ভালুকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়।

স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতারা এখানে গড়ে তোলে বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন হত্যা, নারী ধর্ষন,বাড়ীঘরে আগুন ও লুটপাট চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। আফছার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ভালুকা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার আক্রমন চালিয়েছে।

এছারা আমলীতলাযুদ্ধ, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল,গফরগাঁও,ফুলবাড়ীয়া,শ্রীপুর, মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে আফছার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীন সহ  ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরন করেন।

দিবসটি পালন  উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ  ভালুকা উপজেলা  কমান্ডের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে । কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মূক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র‌্যালী , কবর জিয়ারত ,  শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ।  

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্তরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক  এমপি । বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ এমপি , প্রধান আলোচক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড:মোহিত উল আলম , জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী , পুলিশ সুপার মোঃ মঈনুল হক , জেলা কমান্ডার আলহাজ¦  মোঃ আনোয়ার হোসেন , উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম মোস্তফা, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও যুবলীগনেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম পিন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল আহসান তালুকদার  প্রমুখ । সভাপতিত্ব করবেন মফিজুর রহমান ।  

{ সংবাদ - আতাউর রহমান তরফদার , আসাদুজ্জামান সুমন }



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই