তারিখ : ০১ মে ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আপডেট-ভালুকায় চার খুনের মুল হুতা সনাক্ত আটক ৫

আপডেট-ভালুকায় চার খুনের মুল হুতা সনাক্ত আটক ৫
[ভালুকা ডট কম : ১৭ ডিসেম্বর]
১৫ ডিসেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে ভালুকার হবিরবাড়ী লবনকোঠা গ্রামে নিজ বাসায় দুই শিশু মেয়ে ও স্ত্রী সহ হবিরবাড়ী ইউনিয়ন শ্রমিকদলের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু (৪০) দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়।

এ ঘটনায় নিহত রফিকুলের বাবা ওয়ারেছ আলী বাদী হয়ে রফিকুলের বন্ধু বাসের হেলপার হাফিজুর রহমান তনুকে প্রধান আসামী করে ৪ জনের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর বুধবার ডিবি পুলিশ হাফিজুর রহমান তনুর স্ত্রী হোসনা, ভায়রা রফিক, রফিকের স্ত্রী জোৎনা, তনুর বন্ধু টিভি মেকার সোহেল, আঃ বাতেন সহ সন্দেহ ভাজন ৫ জনকে আটক করেছে।

খুনের কারন হিসেবে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে নানা কথা। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ রফিকুলের ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী পারুলকে বিবস্ত্র অবস্থায় মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় মহিলাদের সহায়তায় কাপড় পরায়। পাশেই শিশু মেয়ে জেনিয়া (৭) রিপা (১) দুই মেয়ের মুখে কাপড় বাধা অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর ধারনা দুবৃত্তরা পারুলকে ধর্ষনের পর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং দুই শিশুকে মুখে মাফলার ও গামছা বেঁেধ হত্যা করেছে। ঘটনার সময় বাস নিয়ে বাড়ী এসে পরায় রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বাড়ীর গেটের সামনেই বাসের ভিতর দুবৃত্তদের ধারালো  অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়।

এলাকাবাসী ও নিহত রফিকুলের পারিবারিক সূত্রে জানাযায় যশোর এলাকার হাফিজুর রহমান তনু গত দুই বৎসর যাবৎ ভালুকার হবিরবাড়ীর সীডষ্টোর বাজারে রফিকুলের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। রফিকুলের বাড়ীতে আসা যাওয়া খাওয়া দাওয়ার  সুবাদে তাদের মধ্যে সু সম্পর্ক তৈরী হয়। এক সময় রফিকুল নিজে একটি বাস কিনলে ওই বাসে তনু হেলপারির কাজ করে। এর মধ্যে তনু বিয়ে করে বউ নিয়ে রফিকুলের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস শুরু করে। কিছুদিন পূর্বে তনু তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেও রফিকুলের বাসায় যাতায়াত অব্যাহত থাকে আর লালসার ছোখ পড়ে বন্ধুর স্ত্রীর দিকে। কয়েকদিন অনুপস্থিতির পর ঘটনার আগেরদিন বিকালে তনুকে ওই বাড়ীতে যেতে দেখেছে আশপাশের লোকজন আর সেই রাতেই ঘটে লোম হর্ষক নির্মম হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের পর হতে তনু গা-ঢাকা দিয়েছে। তনুই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে নিহতের পরিবারের দাবী। তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার ও এই নির্মম হত্যা কান্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবী করেছেন।

শেফালি আক্তার পারুলের মা আলতান নেছা জানান, রফিক ঢাকায় দক্ষিণখান এলাকায় গাড়িতে সহায়তাকারী হিসাবে কাজ করতো। পরে সে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরি নেয়। সেই ইনসুরেন্স কোম্পানিতে আমার মেয়েও চাকরি করতো। সেই সুবাদে আমার মেয়ের সাথে রফিকের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে আনুমানিক ৬/৭বছর পূর্বে বিয়ে হয়। রফিকের আচার ব্যবহারে মুগ্ধ  হয়ে আমি আমার ঢাকা দক্ষিণ খানের জমি বিক্রি করে লবণ কোঠায় জমি ক্রয় করে জামাইকে (বাচ্চু) বাড়ি করে দিয়ে ছিলাম। তাদের বাড়ির পাশে আমিও একটি বাড়ি করি।

নিহত বাচ্চুর ভাবি হামিদ খাতুন জানান,বাচ্চু আগে ঢাকায় দক্ষিণ খান এলাকায় প্রথমে মনিরা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে।তাদের ঘরে বাপ্পী নামে এক সন্তান জন্ম হওয়ার পর তাদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে ওই এলাকায়  মৃত তারাজ উদ্দিনের মেয়েকে শাফালি আক্তার পারুলকে প্রেম করে বিয়ে করে। এবং তাদের সংসার খুব ভালই চলছিল। তাদের মাঝে কোন ঝগড়া বিবাদ হতো না। নিহত শেফালী আক্তারেরও আগে দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয়।ওই ঘরে একটি মেয়ে সন্তান হওয়ার পর ওই সন্তান মারা যায়।

প্রতিবেশি শরীফা আক্তার বলেন,শেফালী খুবই নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মহিলা ছিল সে কখনো কোন দলে মেলে যায়নি।সবার সাথেই হাসি খুশির ভাবে কথা বলতো।প্রতিবেশি শাহাব উদ্দিন বলেন, বছর তিনেক পূর্বে বাচ্চু এখানে বাড়ি করে বসবাস করছে। সে কেন খুন হলো ? কার  সাথে তো কোন সময় ঝগরা বিবাদ করতে দেখিনি। গত নির্বাচনের পূর্বে তার একটি বাস গাড়ি সিডস্টোর বাজারের কাদিরের মিলের সামনে রাতের বেলা আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলে। এরপর সে বেশির ভাগ সময় গাড়িতেই রাত্রিযাপন করতো।

নক্ষত্র ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র সতীর্থ শিপন বলেন,  জীনিয়া আমার সাথে ইংলিশ মিডিয়ামে নার্সারীতে পড়তো,তার রোল নম্বর ছিল এক। ১৬ডিসেম্বর আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠান ছিল। জীনিয়া খুন হওয়ায় তার জন্য আমার খুব খারাপ লাগতেছে।

স্কুলের শিক্ষক আশিকুর রহমান শিপন বলেন,জীনিয়ার খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল এবং তার পরিবারের লোকজনের জন্য শিক্ষক,শিক্ষার্থ ও অভিভাবকগণও চোখের পানি ফেলছে। এবং এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি এ স্কুলের পক্ষ থেকে।

বাচ্চুর মা রাবেয়া খাতুন বলেন,আমার ছেলে ও ছেলের বউ অপরাধ করতে পারে কিন্ত আমার দুটি নাতির কি দোষ ছিল একথা বলেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বাচ্চুর পিতা ওয়াইজ উদ্দিন বলেন,কয়েক মাসে পূর্বে আমার ছেলেকে সিডস্টোর বাজারে জমি সংক্রান্ত ও রাজনৈতিক কারণে আতা ঢালী,হানিফ,ফালূ ড্রাইভার মারপিট করে। এঘটনায় ভালুকা থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে ছিল।আমার ছেলে বাচ্চু,ছেলের বৌ ও দুই নাতনীকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। খুনিরা খুন করে ঘর থেকে টিভি ও স্বর্ণালংকার,মোবাইল ফোন, মূল্যবান কাপড় চোপও ভর্তি একটি ট্রাংক লুট করে  নিয়ে যায়।

হবিরবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোর্শেদ আলম বলেন,এটা কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয়। এ ঘটনায় এলাকার নিরীহ কোন ব্যক্তি যেন হয়রানী না হয়। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে  এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন।

কে এই তনু
তনু ৪/৫বছর পূর্বে ভালুকা উপজেলা সিডস্টোর এলাকায় টিএম টেক্্রটাইল মিলে চাকরি করতো। সেই মিলের শ্রমিকদেরকে বাচ্চু তার নিজের বাস দিয়ে আনা নেয়া করতো। সেই সুবাদে বাচ্চুর সাথে তনুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তনু চাকরি ছেড়ে বাচ্চুর বাসেই সহযোগি হিসাবে চাকরি করতো। বাচ্চু তাকে খুব বিশ্বাস করলেও বাচ্চুর স্ত্রী তনুকে সহ্য করতে পারতো না। ঘটনার দিন রাতে প্রতিবেশিরা তনুকে বাচ্চুর বাড়িতে দেখলেও ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে। তনু সিডস্টোরে  চাকরি করার সময় যশোহর এলাকায় তার বাড়ি বলে পরিচয় দিত।
 
এদিকে বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেলে ময়না তদন্ত শেষে চার জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার পর গ্রামের বাড়ী পাড়াগাঁও বড়চালা গ্রামে নিয়ে আসলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। এ সময় উপস্থিত অনেক নারী পুরুষ কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। পরে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এদিকে পুলিশ হাফিজুর রহমান তনুকে গ্রেফতারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই