বিস্তারিত বিষয়
গাছের নিচে চকলেট পাঠশালা!গরিব ও শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান
গাছের নিচে চকলেট পাঠশালা!গরিব ও শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান
[ভালুকা ডট কম : ০৭ জুলাই]
উপরে খোলা আকাশ, নিচে চালার চট। চেয়ার টেবিল কিছুই নেই, আছে শুধু হৃদয় পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা সমাজ ও মানুষের জন্য মহৎ কিছু করতে চান। এমনই একজন আলোকিত মানুষ মোবারক হোসেন হৃদয়। তার টানে ছুটে আসে কোমলমতি শিশুরা। গাছের ডালে ব্লাকবোর্ড। অ, আ, ক, খ শিখছে শিশুরা। কেউ করছে আবৃত্তি, কেউ গাইছে গান। গাছের ঘন পাতা কড়া রোদ থেকে এদের বাঁচায় বটে। বৃষ্টি এলে তো আর রক্ষা নেই। তখন পড়িমরি করে ভোঁ দৌড়। একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়া একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় এটি। চাল-চুলোহীন এ বিদ্যালয়ের নাম ‘চকলেট পাঠশালা’।
শক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে বিদ্যালয়টি। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ০৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পড়ানো হয়। সেখানে বাংলা, ইংরেজী, গণিত সহ আরবী বিষয়েও প্রাথমিক জ্ঞান দেন হৃদয়। প্রতিদিন নাম ডাকা ও কয়েক মাস অন্তর অন্তর পরীক্ষা এ সবই হয় এই পাঠশালায়। গরিব ও শিক্ষা লাভের সুযোগ বঞ্চিত প্রায় অর্ধশতাদিক শিশু এখানে পড়াশোনা করছে।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের কান্দিগ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মোবারক হোসেন হৃদয়। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে হৃদয় চতুর্থ। বাবার নাম মো. ছেনু মিয়া
মোবারক হোসেন হৃদয় প্রায় নয় বছর আগে তাঁর বাড়িতে পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠা করেন। নির্দিষ্ট কোন ঘর না থাকায় প্রতিবছরই বৃষ্টিতে ব্যাহত হত পড়ালেখা। কেননা বৃষ্টি এলেই বই-শ্লেট হাতে শিশুরা দৌড়ে আশ্রয় নিত পাশের কোনো বাড়িতে। সমস্যা আর সংকটে চকলেট পাঠশালা এখন চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে। পাঠশালাটির প্রতিষ্ঠাতা মোবারক হোসেন হৃদয় ২০১৪ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়।
তিনি জানান, নয় বছর আগেই তাঁর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। অসুখ-বিসুখে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। স্বল্প আয়ের সংসার। কৃষক বাবা ওই অবস্থায় তাঁকে জুতার কাজ করতে ঢাকায় পাঠান। জুতার কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, অগণিত শিশু জীবিকা রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করছে। লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের মৌলিক চাহিদা থেকে ওরা বঞ্চিত। এসব বিষয় তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। কয়েক মাস ঢাকায় থেকে ২০০৬ সালে হৃদয় বাড়ি ফিরে আসেন। এলাকার সমৃদ্ধশালী পরিবারের সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে সে। এর পরই শুরু হয় ‘চকলেট পাঠশালা’র পথচলা। তাঁর গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারের শিশুই লেখাপড়া করে না। বাবার সঙ্গে মাঠেঘাটে কাজে যায়। আর এলাকার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও বহু দূরে। আবার ওই স্কুলে যেতে হলে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক পার হতে হয়। পরে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের পাঠশালায় আসতে উৎসাহী করেন।
হৃদয় জানান, প্রথম দিকে বাচ্চারা নিজ নিজ বাড়ি থেকে চটের বস্তা নিয়ে আসত। পরে এক বন্ধু বড় একটি চাটাই কিনে দেন। একটি ছোট ব্লাকবোর্ড কিনে আনা হয়। এরপর বাড়ির পেছনে গাছতলায় পাঠশালার গোড়াপত্তন করা হয়। শিক্ষক নিজে বই, শ্লেট, চক ইত্যাদি শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করেন। আর দেন কোমল মতি শিশুদের মিষ্টি চকলেট। তাইতো তিনি বাচ্ছাদের কাছে চকলেট স্যার হয়ে ওঠেছেন। বাচ্চাদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে তিনি এসব করে যাচ্ছেন।
গাছতলায় দাঁড়িয়ে ছেলের পড়াশোনা পরখ করছিলেন শিশু শিক্ষার্থী মাহিদুলের মা নাসিমা বেগম। তিনি
জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এমন অবুঝ শিশুদের সেখানে পাঠানো কষ্টকর। বড় সড়ক পার করে স্কুলে পাঠাতেও বুকটা কাঁপে। তাই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির আগে বাচ্চাকে হৃদয় স্যারের এখানে দিয়ে তিনি স্বস্তিতে আছেন।
কান্দিগ্রামের দুই শিক্ষার্থীর অভিবাভক বলেন, এখন থেকে ৫/৬ বছর আগে আমি কজন বন্ধুর সহযোগীতা নিয়ে হৃদয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বই-শ্লেট কিনে দেই। আমি অল্প আয়ের মানুষ। যদি পারতাম সবসময় হৃদয়কে সহযোগীতা করতাম। হৃদয়ের কাছ থেকে পড়ে আমার বড় মেয়ে লিজা ৩য় শ্রেণীতে এবং মেজো মেয়ে লিয়া ১ম শ্রেণীতে পড়ছে।
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুল রহমান বলেন, ছোট শিশুদের পড়ানো অনেক কষ্টের। তাও আবার গাছতলাতে সত্যি হৃদয়ের পড়ানো দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। প্রতিদিন নিয়ম করে এভাবে পড়িয়ে চলেছে সে, সমাজকে আলোকিত করার লক্ষে, শিশুরাও আগের চেয়ে ভাল করছে, তাতে অবশ্যই সে প্রশংসার দাবিদার। আমি তাঁর উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করছি।
সংকটের কথা বলতে গিয়ে হৃদয় নিজেও জানান অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য ‘চকলেট পাঠশালাটি’র উন্নয়ন করা যাচ্ছেনা। তবে শুভাকাঙ্কিদের সহযোগীতায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ১৩ ফুট প্রস্থ্য একটি ঘর তৈরি করেছেন। কিন্তু অর্থ অভাবে ঘরের বেড়া এখনও দেওয়া হয়নি। অনেক খরচ স্কুলটি চালাতে বর্তমানে চকলেট স্যার হৃদয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কটিয়াদী উপজেলা থেকে পরিদর্শনে আসা আলোর দিশারী মেধা বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন ফুলো বলেন, সমাজ আলোকিত করার এ ধরনের প্রয়াস খুব কমই দেখা যায়। তাকে সহযোগিতা করে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।
চকলেট পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা মোবারক হোসেন হৃদয় বলেন, বর্তমানে স্কুলটি চালাতে কষ্ট হচ্ছে, দানশীল ব্যক্তি বা সরকারী বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে আসলে আমার কাজটি আরো সমপ্রসারিত হবে।
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- বেনাপোল হুমকির মুখে আমদানি বাণিজ্য [ প্রকাশকাল : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে [ প্রকাশকাল : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০২.১২ অপরাহ্ন]
- বার বছর ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি [ প্রকাশকাল : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩০ অপরাহ্ন]
- সাংবাদিককে সহযোগিতা করায় বদলী [ প্রকাশকাল : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- ঈদ যাত্রায় আইজিপির আহবান [ প্রকাশকাল : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- সাতচল্লিশ বছরের খাজনা চল্লিশ টাকা [ প্রকাশকাল : ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬.৫০ অপরাহ্ন]
- সংস্কারের কয়েক মাস না যেতেই খানা খন্দ [ প্রকাশকাল : ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৭.৩০ পুর্বাহ্ন]
- নওগাঁয় কলেজ ফান্ডের টাকা লোপাট করলেন ইউএনও [ প্রকাশকাল : ২২ মার্চ ২০২৪ ০১.১৩ অপরাহ্ন]
- গুরু শিষ্যের প্রেমময় জীবন [ প্রকাশকাল : ১৬ মার্চ ২০২৪ ০১.০২ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন [ প্রকাশকাল : ১০ মার্চ ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নিয়ে বিপাকে প্রকল্পের বাসিন্দারা [ প্রকাশকাল : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- অনুমোদন ছাড়াই চলছে প্রাণিসম্পদ ব্যাংক [ প্রকাশকাল : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
- আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে নয়-ছয় [ প্রকাশকাল : ০৩ মার্চ ২০২৪ ০১.১০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় অনুষ্ঠিত হলো দুদকের গণশুনানি [ প্রকাশকাল : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁর সরকারী হাসপাতাল! [ প্রকাশকাল : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৯.০০ পুর্বাহ্ন]