তারিখ : ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রিংটোন-ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গান নিষিদ্ধ শিল্পী-প্রযোজকদের প্রতিক্রিয়া

রিংটোন-ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গান নিষিদ্ধ শিল্পী-প্রযোজকদের প্রতিক্রিয়া
[ভালুকা ডট কম : ১০ জুলাই]
মোবাইল ফোনে রিংটোন এবং ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা এবং উপমহাদেশীয় সব ধরনের গান ব্যবহার বন্ধের জন্য রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এ আদেশ দেন।

মোবাইল ফোনের রিংটোন বা ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি, ভারতীয় বাংলা চলচিত্র অথবা উপমহাদেশের অন্য কোনো ছবির গান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন উচ্চ আদালত। মোবাইল ফোনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসে এসব গান এবং সুর কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না– এ সংক্রান্ত একটি রুল জারী করেছেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব চেয়েছেন।

আমদানী নীতি ২০১২-১৫-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী ভারতীয় বা উপমহাদেশের কোনো ছবি বাংলাদেশে আনা যাবে না। এ কারণে ওয়েলকাম টিউন এবং রিংটোনে এসব সংগীতও ব্যবহার করা যাবে না।

মামলাটি দায়ের করেন মিউজিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) সভাপতি একেএম আরিফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহেদ আলী পাপ্পু। জানা গেছে, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় ও উপমহাদেশের সব ধরনের গান মোবাইল ফোনে রিংটোন, ওয়েলকাম টিউন তথা সব ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ থাকবে। এসব বিষয় বলা হয়েছে তথ্যসচিব, সংস্কৃতিসচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, বাণিজ্য সচিব, অর্থসচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও সব মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরকে।

কুমার বিশ্বজিৎ
রিংটোন-ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গান নিষিদ্ধ হওয়ার খবর অবশ্যই ইতিবাচক। আমি এমআইবির সভাপতি থাকাকালেই এ বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছিলাম। আমরা মাঠে নামতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন অর্থনৈতিক অবস্থা এতো ভালো ছিলো না। তাছাড়া আমরা হাতেগোনা দুই-তিনজন শুধু এ বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। অনেকে রাজি হয়নি। কারণ তখন এই ব্যবসা খুব রমরমা ছিলো! এবারও হাতেগোনা কয়েকজনই কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করেছেন। এজন্য আমি তাদের সাধুবাদ জানই।

এখন বাংলা গানের চাহিদা বাড়বে অনায়াসে বলা যায়। উচ্চ আদালতের এই আদেশের প্রতিফলন পাওয়া যাবে ডাউনলোডের ক্ষেত্রে। তবে পাইরেসির জন্য আলাদা টিম করা দরকার। গ্রামে-গঞ্জে যারা অবৈধভাবে গান বিক্রি করছেন তাদের দিকে এবার নজর দেওয়ার সময় এসেছে। এমআইবি এ নিয়েও কাজ করতে পারে। তারা মফস্বলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে পারে। মাসব্যাপী কোন অ্যালবাম কতোটা বিক্রি হলো তার হিসাব থাকবে এমআইবির পরিবেশকদের কাছে। এর মাধ্যমে কতো টাকা আয় হলো তা দেখবে কালেক্টরি বডি। এতে করে সংগীত শিল্পের টাকা সংগীত শিল্পেই থাকবে। আমি যখন উদ্যোগ নিয়েছিলাম তখনই দেড় লাখের মতো দোকান ছিলো, এখন তো আরও বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে যদি কোনো আইটেম এক হাজার কপিও বিক্রি করা হয় তাহলে দেড় কোটি টাকা আসে। মোদ্দা কথা, শিল্পী আর প্রযোজকরা টাকা পেতে থাকলে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন, ফলে বাজারও আবার চাঙ্গা হবে। কলকাতায় এই রীতিতে চলছে। আমার জিনিস অন্য কেউ বিক্রি করবে, অথচ আমি কোনো রাজস্ব পাবো না, এটা তো হতে পারে না। এটা যদি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তাহলে ডাউনলোডের চেয়েও রিটার্ন বেশি হবে এদিকে।

আসিফ আকবর
প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন অবৈধভাবে উপমহাদেশের গানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ওয়েলকাম টিউন এবং রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের এই অবৈধ তৎপরতায় শত শত কোটি টাকা পাচার হয়েছে এবং তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেনিয়া মানসিকতা এবং চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে আমরা শিল্পীরা লড়েছি। আমাদের সংগঠন মিউজিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) পক্ষ থেকে গত জুনে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিলো আদালত অবশেষে রুলসহ একটি আদেশ দেন। এমআইবিকে আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট এবং দ্য রিপাবলিক অব ইয়াং মিউজিশিয়ানসের (আরওয়াইএমবি ) পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। বেনিয়া মোবাইল কোম্পানি এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, চলবে।

ফাহমিদা নবী
রিংটোন-ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গান নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি খুবই খুশি। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিল্পীরা এতোদিন লড়েছি। অডিও প্রযোজকরা হয়তো এখন নিজেরাই বুঝতে পেরেছেন হিন্দি গানের আধিক্যে তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে! দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কোটি কোটি। সবার প্রতি আমার আহ্বান- দেশকে ভালোবাসুন, দেশের গান শুনুন। দেশীয় রিংটোন ব্যবহার করুন। আগোরা, নন্দন, মিনা বাজারে হিন্দি বা ইংরেজি গানের পরিবর্তে বাংলা গান বাজলে আরও খুশি হবো। সুপারশপ কিংবা বিপণি বিতানে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের বাংলা গান শোনালে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হবো।

একেএম আরিফুর রহমান
এ রায়ের মাধ্যমে বাংলা সংগীতের বিজয় হয়েছে। আমরা মনে করি, এমআইবির পক্ষ থেকে এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি ছিলো। এমনিতেই এখন দেশীয় সংগীতাঙ্গনের নাজুক পরিস্থিতি। বিদেশি গানের আগ্রাসনে এই অঙ্গন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আমাদের এখানে রিংটোন কিংবা ওয়েলকাম টিউনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস থেকে যতো আয় হয়, তার সিংহভাগ টাকা ভারতে চলে যায়। এটা গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও আমাদের প্রকাশকদের জন্য খুব দুঃখজনক ব্যাপার।

এখানে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানগুলো হিন্দি গান নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, চলচ্চিত্র আর টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে আমাদের কোনো কিছুই ভারতীয় বাজারে ঢোকাতে পারছি না। কিন্তু তাদের টিভি চ্যানেলে সয়লাব আমাদের আকাশ। ভারত বড় দেশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুণগত মানের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে দেশটি এগিয়ে। তাই তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘আগে আমাদের দেশকে পানি দিয়ে তারপর চিন্তা করবো বাংলাদেশকে নিয়ে।’ ওই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদেরকেও একই চেতনায় বিশ্বাস রাখতে হবে।

আক্ষেপ নিয়েই বলছি, হিন্দি সিরিয়াল তথা বিদেশি জিনিসের প্রতি আমাদের বাঙালিদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। সেখানে হিন্দি গানের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞার ফলে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলে এই চাহিদা কমতে পারে। শ্রোতাদের কাছে আমাদের আহ্বান, নিজেদের যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকি, তৃপ্ত থাকি। আশা করি, সবার সমর্থন আর কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছায় আমাদের বাংলা গান এগিয়ে যাবে।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

বিনোদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই