তারিখ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় কৃষিতে নতুন বিপ্লব আনলেন মালটা চাষী মনমথ সরকার

ভালুকায় কৃষিতে নতুন বিপ্লব আনলেন মালটা চাষী মনমথ সরকার
[ভালুকা ডট কম : ১৭ অক্টোবর]
ভালুকার কৃষিতে সম্পুর্ণ নতুন অর্থকরী ফসল হিসাবে মালটার আবাদ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন মনমথ সরকার। যিনি এলাকায় মাল্টা বাবু নামে অধিক পরিচিত। তারই উৎসাহে মালটার আবাদ করে বর্তমানে অনেকেই লাভের মুখ দেখছেন। যে সব চালা জমি এক সময় গোচারণভূমি হিসাবে সারা বছর অনাবাদী ফেলে রাখা হতো ওই সব জমিতে এখন মাল্টার আবাদ করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।

১৫ অক্টোবর রোববার সরজমিন উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সাইনবোর্ডে লেখা পশ্চিম পাঁচগাঁও মাল্টা বাগান ও নার্সারী। সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কাঁচা-পাকা মালটা,সবুজ পাতার ফাকে ফাকে আবার পাতা ঝরা ডালেও ঝুলে আছে দৃষ্টিকাড়া মনোলোভা মালটার ঝোকা। ভালুকায় মালটার আবাদ করে যিনি ব্যাপক সারা জাগিয়েছেন কথা হয় সেই বাগান মালিক বৃক্ষপ্রেমী মনমথ সরকারের সাথে। তিনি জানান বহুদিন পূর্বে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে ভালুকায় এসেছিলেন চাকরির সুবাদে। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১,২,ও ৩ অফিসে দীর্ঘ ২৫ বছর সুপারভিশন ও স্টেকিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরী করেছেন।২০০৯ সালে ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে মনমথ সরকার জমি কিনে প্রথম মালটার আবাদ শুরু করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত কিছুটা শারিরিক প্রতিবন্ধী মনমথ সরকার মালটা বাগানের তদারকি করছিলেন ঘুরে ঘুরে।

তিনি জানান ২০০৯ সালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাশবন নার্সারী থেকে ৫ হাজার টাকায় একটি মাত্র মাল্টার চারা কিনে এনে রোপন করেন। এক বছর পর ওই গাছে ৫/৬ টি ফল আসে। ফলগুলি পাকার পর ক্ষুবই মিষ্টি হয়। এর পর তিনি শুরু করেন মাল্টার আবাদ। উপজেলার পাঁচগাও গ্রামে অনাবাদী ফেলে রাখা জমি কিনে তাতে শুরু করেন মাল্টা চাষ। ওই গ্রামের আফতাব উদ্দীন নামে এক ব্যাক্তি মনমথের সাথে ৩ বৎসরের জন্য ব্যাবসায়িক চুক্তিতে মালটা বাগানে শ্রমিক মালিক হিসাবে দেখাশোনা ও পরিচর্যার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কয়েক বছর পর তার বিশ্বস্থতার পুরষ্কার হিসেবে মনমথ সরকার খুশি হয়ে তাকেও ছোট বড় মিলিয়ে ৩০০ মালটা গাছ বিনে পয়সায় রোপনের জন্য দেন। বর্তমানে মনমথ সরকারের বাগানে দুই একর জমিতে ৪ শ’র মত বড় গাছ ও প্রায় ১০ হাজার চারা গাছ  রয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি সারে ৪ লাখ টাকার  মাল্টা বিক্রি করেছিলেন। এ বছর ফল ও চারা কিক্রি করে ১০/১২ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ছেলে সায়র সরকার অর্ক শাহ জালাল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ফিজিক্সে অনার্স ও মেয়ে তটিনী সরকার সুনম মমিনুন্নেছা কলেজ হতে এইচ, এস সি পাশ  করেছেন। স্ত্রী দেবীরানী জোয়ারদার ২০০২ ইং সাল হতে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ ভালুকায় বিলিং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ে তটিনী ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে জেলা ও জাতীয় পুরষ্কার লাভ করেছে। মাল্টা চাষে ব্যাপক সফলতার জন্য মনমথ সরকার ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারী উসমানী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরষ্কার ১৪২০ লাভ করেছেন।

তিনি মাল্টার আবাদ করে নিজে লাভবান হয়েছেন পাশাপাশি আফতাব উদ্দীনের পরিবারটিকেও আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে সাহায্য করেছেন। শুধু মাল্টা নয় বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে তার বাগানে। চিকন পাতার একটি গাছ দেখিয়ে বললেন ওটি অষ্ট্রেলিয়ান লিচু আকৃতিতে নাকি আপেলের মত প্রায় স্বাদে অতি মিষ্টি। একটি গাছে কয়েকটি বেল দেখালেন আকৃতিতে বড় বড়। তার মাল্টা বাগানে সব সময় কর্মরত রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক।  ৪ হাজার ৩০০ শ টাকা মন দরে বাগান থেকে পাইকাররা এসে মালটা কিনে নিচ্ছেন। নতুন অবস্থায় চারা গাছে ২০ কেজি থেকে ৪০/৫০ কেজি পর্যন্ত মালটা আসে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মালটা ধরেছে বেশী। গাছ যত বড় হয়ে ডালপালা বিস্তার করবে তত বেশী ফল আসবে। ফালগুন চৈত্র মাসে মালটার মুকুল আসে, এ সময় গাছের গোড়ায় প্রচুর পানি ও সার, কীটনাশক দিতে হয়। প্রায় নয় মাস এটি পরিপক্ক হতে সময় লাগে যে কারনে বছরে মাত্র একবার ফল পাওয়া যায়। তবুও মালটা চাষ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ব্যাপক লাভজনক এর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। ভালুকার মত উঁচু পাহাড়ী জমি মালটা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আকারে  ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের হলেও প্রচুর মিষ্টি। গাছে পেকে হলুদ রং ধারন করে বেশী সময় থাকলে মাটিতে ঝরে যায়।সব গুলি গাছে যখন ফল ধরবে তখন এসব বাগান হতে শত শত মন মালটা ভালুকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজার জাত সম্ভব হবে। এ জন্য কৃষি বিভাগ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে তিনি দাবী করেন।

কিন্তু গত দুই বছরে তিনি মালটা সহ বিাভন্ন জাতের আম, লিচু, পেয়ারা, কলা সহ নানা রকম ফল চাষ করে তা থেকে অর্থ রোজগার করছেন। এছারা এসব ফলের চারা তৈরী করে তাও বিক্রি করছেন। নিজের উৎপাদিত মালটার কলম চারা ছোট গুলি ৫০০ টাকা ও বড় গুলি ১০০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। বর্তমানে স্ত্রী,এক ছেলে, এক মেয়ে, নিয়ে সুখে শান্তিতে রয়েছেন। ২০১৪ সালের ১৫ জুন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে কারনে তার দেহের এক দিকে সামান্য অবস হয়ে যায়। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। মাল্টা চাষের সফলতায় তিনি বঙ্গবন্ধ কৃষি পুরষ্কার লাভ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে। তিনি ভালুকার প্রত্যন্ত এলাকার অনাবাদী ফেলে রাখা চালা জমিতে মালটা চাষে গ্রামের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের কৃষি বিভাগের প্রতি পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন।

মনমথ সরকারের মাল্টা বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন । উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান ভালুকায় কৃষিতে মাল্টার আবাদ একটি নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে চাষীদের মধ্যে বিনামূল্যে চারা বিতরণ সহ প্রদর্শনী ভিত্তিক মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। তিনি জানান ভালুকার বেশ কিছু অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই