তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বাংলা সাহিত্য-সংগীতের পথিকৃত যুগস্রষ্টা কবি নজরুল -রাষ্ট্রপতি

বাংলা সাহিত্য-সংগীতের পথিকৃত যুগস্রষ্টা জাতীয় জাগরনের কবি কাজী নজরুল ইসলাম -রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ
[ভালুকা ডট কম : ২৫ মে]
বাংলা  সাহিত্য -সংগীতের পথিকৃত যুগস্রষ্টা  জাতীয় জাগরনের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।তার কালজয়ী  প্রতিভা  ও জীবন দর্শন মানবিক মূল্যবোধের স্ফুরন, সমৃদ্বশালী লেখনী বাংলা  সাহিত্যের  এক অমূল্য সম্পদ। নজরুল শুধু বাংলার  জাতীয় কবিই নন,তিনি জাগরনের কবি, সাম্যের কবি । তিনি শোষন বঞ্চনা অত্যাচার,কুসংস্কার ও পরাধীনতার বিরুদ্বে তার লিখনীতে তুলে ধরেছেন।

রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি কবির স্মৃতির প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।শুরুতেই আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সূর্য সন্তানদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা। আমি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি কবির কৈশোর স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের  ত্রিশালের দরিরামপুর নজরুল একাডেমী মাঠে স্থাপিত স্থায়ী নজরুল মঞ্চে শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত  ১১৯তম জন্মজয়ন্তী ও জন্মবার্ষিকীর তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন কালে এ সব কথা বলেছেন।

তিনি বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের এই ত্রিশালে। কবির প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ সাহেব তাঁকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং বালক নজরুলের লেখাপড়ায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে প্রত্যয়ে তিনি তাকে নিজ গ্রামে প্রেরণ করেন। এ ভাবেই ১৯১৪ সালে নজরুলের দরিরামপুর জীবনের সূচনা ঘটে। সেখানে তিনি দরিরামপুর স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কবি তার ময়মনসিংহ জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন জীবন সায়াহ্নে। ময়মনসিংহের সাহিত্য সম্মেলনে কবিকে আমন্ত্রণ জানানো হলে শারীরিক অসুস্থতার কারণে  উপস্থিত হতে পারেন নি। তাই লিখিত ভাষণে তিনি বলেন, “এই ময়মনসিংহ  আমার কাছে নতুন নহে। এই ময়মনসিংহ জেলার কাছে আমি অশেষ ঋণে ঋণী। আমার বাল্যকালের অনেকগুলি দিন ইহার বুকে কাটিয়া গিয়াছে।  এইখানে থাকিয়া আমি  কিছু দিন লেখাপড়া করিয়া গিয়াছি। আজও আমার মনে সেই সব প্রিয় স্মৃতি উজ্জ্বল ভাস্বর হইয়া জ্বলিতেছে”।

তিনি আসানসোলের রুক্ষ এলাকা হতে আগত নজরুলের মনে সুজলা, সুফলা শস্য-শ্যামলা ত্রিশালের প্রকৃতি প্রবলভাবে রেখাপাত করেছিল। প্রকৃতি প্রেম  এবং সৃষ্টিশীলতার এই পরিবেশে কবিকে দারুণভাবে উদ্বেলিত করেছিল। বাঁধনহারা কবি নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে। শ্রেণিকক্ষে গতানুগতিক পড়াশুনার প্রতি ততটা মনোযোগী না হলেও বরাবরই তিনি ভাল ফলাফল করতেন এবং প্রতিভাগুণে তিনি শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রবলভাবে আকৃষ্ট করতেন। সময় পেলে ছুটে যেতেন স্কুলের নিকটবর্তী ঠুনিভাঙ্গা ঝিলের তীরে। আনমনে বাজাতেন বাঁশি।

কবিতার প্রতি কবির ছিল অনবদ্য আগ্রহ। বিশেষত সে বালক বয়সেই তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এ সময় দরিরামপুর স্কুলে মহিম বাবুর পরিচালনায় স্কুলে একটি বিচিত্রা অনুষ্ঠান আয়োজিত হলে নজরুল সেই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ এবং ‘পুরাতন ভৃত্য’ আবৃত্তি করে শিক্ষক-ছাত্রসমেত উপস্থিত সকলকে তাক লাগিয়ে দেন।শুধু এই দরিরামপুর নয় পূর্ববাংলার প্রকৃতির আকর্ষণে তিনি বার বার পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে এসেছেন। বরিশাল, কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা প্রকৃতি অবিভক্ত বাংলার পশ্চাৎপদ জনপদসমূহের মানুষের কাছে এসেছেন, সভা ও অনুষ্ঠান করেছেন। ঐ সব সভায় তিনি বাঙালির জাগরণের কথা বলেছেন, স্বাধীনতার বাণী শুনিয়েছেন, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মন্ত্র দিয়েছেন। অর্থাৎ কাজী নজরুল ইসলাম অবিভক্ত বাংলার বৃহৎ অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন বক্তৃতায়, গানে, আবৃত্তিতে এবং তাঁর বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে।

নজরুল শুধু বাংলার জাতীয় কবিই নন, তিনি জাগরণের কবি, সাম্যের কবি। তিনি শোষণ, । ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, আমাদের জাতীয় সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নজরুলের  লেখনী আমাদের উজ্জীবিত করেছে। তাঁর জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত  প্রেরণার উৎস। পরাধীন ব্রিটিশ আমলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন : ‘বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক!’

দেশভাগের পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন সংগ্রাম তাঁর সৃষ্টিশীলতা বাঙালি জাতিকে করেছে আন্দোলিত। ভাষা সংগ্রামসহ স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর গান, কবিতা, নাটক আমাদের বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর দেশপ্রেম ও উদ্দীপনামূলক গান ও কবিতা আমাদের লড়াই সংগ্রামের স্পৃহাকে করেছে শানিত। তাইতো তিনি আমাদের জাতীয় জাগরণ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন জোরালোভাবে।

তিনি আরো বলেন কালজয়ী কবি অনেকটা নীরব অভিমানে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন । ১৯৪১ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিল কলিকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির রজত-জুবিলি উৎসবে সভাপতির ভাষণে কবি বলেন, “যদি আর বাঁশি না বাজে- আমি কবি বলে বলছিনে- আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি-আমায় ক্ষমা করবেন-আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি-আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম”।সৃষ্টিশীল এই মহান কবির প্রতি সম্মান জানাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ১৯৭২ সালে  কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। কবিকে আবাসন ও চিকিৎসা সুবিধাসহ নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত  কবি এখানেই ছিলেন।

কবি নজরুল সমাজ পরিবর্তনের যে অনির্বাণ শিখা জ্বালিয়েছে তার আলোকচ্ছটা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে ‘সোনার বাংলা’ গড়তে। আমার বিশ্বাস নতুন প্রজন্ম নজরুল চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে এবং বৈষম্যহীন, সমতাভিত্তিক একটি অসম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে দেশপ্রেমের মহান ব্রতে উজ্জীবিত হয়ে জাতি গঠনে অর্থবহ অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।নজরুল স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন বেগম আকতার কামাল।ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মসিউর রহমান।

নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে ত্রিশাল উপজেলা সদরে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। সর্বত্র বইছে আনন্দের বন্যা। ত্রিশাল শহরের গুরুত্বর্পূণ স্থানগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে রয়েছে নজরুল মঞ্চসহ অনুষ্ঠানের মূল প্যান্ডেল।

ত্রিশাল থানার ওসি জাকিউর রহমান জানান,আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী সর্তক রয়েছে।ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজাফর রিপন জানান,মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন ও নজরুল জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে সর্বত্র নিছিদ্র নিরাপত্তা রয়েছে।পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই