তারিখ : ০৮ মে ২০২৪, বুধবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে ঘর দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হরিলুট

রাণীনগরে ঘর দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হরিলুট
[ভালুকা ডট কম : ২৭ অক্টোবর]
নওগাঁর রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নে প্রকল্পের বরাদ্দ না থাকলেও ঘর দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাত করে হরিলুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেক অতিদরিদ্র মানুষ টাকা দিলেই মিলবে ঘর এই আশায় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে স্থানীয় মেম্বারদের ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ইউনিয়নের মেম্বার জাহিদ হাসান, শ্রী: দীনেশ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বারের স্বামী মো: মকবুলসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে অসহায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে আগামীতে এই ইউনিয়নে এই প্রকল্প আসবে কিনা তা কেউ জানে না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ‘জমি আছে ঘর নেই’ এই আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে তৃনমূল পর্যায়ের জমি আছে অথচ ঘর নির্মাণ করতে পারছে না এমন অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারদের জন্য বিনামূল্যে সরকার ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। আর বাকি ৩টি ইউনিয়নে এই প্রকল্পের বরাদ্দ এখনো আসে নাই।  অথচ প্রকল্প এখনো না আসলেও আগামীতে আসবে এই কথা বলে উপজেলার পারইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের জোগসাজগে ইউনিয়নের শতাধিক অসহায় অতিদরিদ্র মানুষকে একটি করে ঘর দেওয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে ৫ হাজার, ৮ হাজার, ১০ হাজার এবং কারো কাছ থেকে ১৫হাজার করে টাকা খরচ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পারইল সরদারপাড়া গ্রামের আরফানের ছেলে মো: রহিদুল ইসলাম বলেন, পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি এখনো কোন ঘর পাই নাই।

একই গ্রামের পশ্চিমপাড়া গ্রামের যতীনন্দ্রনাথ সাহার ছেলে শ্রী: দিবারন চন্দ্র সাহা বলেন, মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। জানি না এই ঘর জীবনে কখনো পাবো কিনা।

পারইল গুচ্ছ গ্রামের সায়েদ প্রামানিকের ছেলে আব্দুল আলীম বলেন, পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। অথচ এই টাকা নিয়ে কয়েক মাস হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ঘরই পেলাম না।

একই গ্রামের মহেন্দ্রনাথ প্রামানিকের ছেলে শ্রী: সুরেশ বলেন, পারইল ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মো: মকবুল আমাকে ঘর দেওয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি এখনো ঘর পাইনি। আজ-কাল বলে শুধু হয়রানী করছে।

পারইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের শ্রী: চন্দন বলেন, আমাকেও মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মো: মকবুল ঘর দেওয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি অনেক কষ্টে এই টাকা যোগার করে তাকে দিয়েছি কিন্তু এখনো ঘরের কোন খবরই নাই।

পারইল গ্রামের খোরশেদের স্ত্রী মোছা: পারভীন আক্তার বলেন, আমি গরীব-অসহায় মানুষ। ঘর দেওয়ার নাম করে জাহিদ মেম্বার আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলো আমি দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদের উপর ৫হাজার টাকা নিয়ে জাহিদকে দিয়েছি। আমাকে সেই ৫ হাজার টাকার জন্য ৩ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়েছে। কিন্তু আমি এখনো ঘর পাইনি।

পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ বলেন, পরিষদের চেয়ারম্যান পুরো ইউনিয়নের ঘরের বিষয়টি সমন্বয় করেছেন। আমি ১৫-১৬ জনকে থেকে টাকা নিয়েছি। আমি চেয়ারম্যানের  নির্দেশে তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছি । তিনি আরো বলেন শুধু আমি নই এই ইউনিয়নের সকল মেম্বাররা এই ঘরের নামে টাকা তুলেছে।

পারইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: জাহিদ হাসান বলেন, যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তারা সবাই ঘর পাবে। ভাই ওয়েট এ্যান্ড সি। আজ প্রকল্প আসেনি কিন্তু কাল প্রকল্প আসবে। তখন তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মজিবর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে ঘরের কোন সরকারী বরাদ্দ নাই। অন্যান্য ইউনিয়নে বাড়ি ঘর হচ্ছে তাই এনজিও মাঠে নেমেছে। পারইল ইউনিয়নে কেউ কোন টাকা দেয়নি তাই এখানে কোন বরাদ্দও আসেনি। মেম্বাররা হয়তো কারো সাথে আতাত করে কিছু টাকা তুলেছে। যদি কেউ কোন মেম্বারের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমি ওই মেম্বারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: মেহেদী হাসান বলেন, ওই ইউনিয়নে ‘জমি আছে ঘর নাই’ এই প্রকল্পের কোন বরাদ্দ এখনো আসে নাই। আগামীতেও আসবে কিনা তা আমার জানা নেই। ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার বিষয়টি আমিও শুনেছি। এটি সম্পন্ন সরকারি প্রকল্প। এখানে কাউকে টাকা দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই