বিস্তারিত বিষয়
মান্দা উপজেলার ৯নং তেতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রথম পর্ব
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব
নওগাঁয় কার্ডে চাল উত্তোলনের স্বাক্ষর,বছরের পর বছর চাল পায়নি কেউই,ফেরত দেওয়া হচ্ছে ছবিবিহীন কার্ড
[ভালুকা ডট কম : ১০ জুন]
অনিয়ম আর দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে জেলার মান্দা উপজেলার ৯নং তেতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেওয়া ১০টাকা কেজি চাল বিতরণের কার্ড জালিয়াতি করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলারদের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দরিদ্রদের তালিকা করে ১০টাকা কেজি চাল বিতরণের কার্ড হলেও গত পাঁচ বছরে কোনও দরিদ্র পরিবার চাল পায়নি।এমন অভিযোগ তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর এলাকাসহ পুরো ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
শংকরপুর গ্রামের আজিমুদ্দীন, হাছেন আলী, সাত্তার মৃধা, চন্দন কুমার, অমূল্য কুমার ও বিরেনসহ শতাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আতাউর রহমান আমাদের ঘরে ঘরে ১০টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের জন্য কার্ড দিয়ে যায়। আমরা প্রথমে ভেবেছি হয়তো নতুন কার্ড হয়েছে। পরে তারা দেখতে পান কার্ডের ভেতরে গ্রহীতার স্বাক্ষরের ঘরে আঠারোবার চাল উত্তোলনের স্বাক্ষর। তারা দাবি করেন, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে কোনও কার্ড পাননি এবং ১০টাকা দরে চাল উত্তোলন করেননি। চাল কে পেয়েছে এ প্রসঙ্গে তারা ডিলার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সুলভ মূল্যে কার্ডে চাল বিক্রির জন্য তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে দুটি ডিলারশিপ রয়েছে। ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে সজল প্রাং এবং তেপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের নামে এই দুইটি ডিলারশিপ।
২০১৬ সালের মার্চে ইউপি নির্বাচনের পর সেপ্টেম্বরে নতুন করে দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া ১০টাকা মূল্যে চাল ক্রয়ের কার্ড তৈরি হয়। কিন্তু সেই কার্ড দরিদ্রদের কাছে বিতরণ না করে ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার যোগসাজশে ডিলারদের সাথে সমোঝতার মাধ্যমে কার্ড রেখে দেয়। আর এই ফাঁকে খাদ্য অধিদফতর থেকে দরিদ্রদের জন্য যতবারই চাল গিয়েছে ততবারই গ্রহীতার স্বাক্ষরের ঘরে ভুয়া টিপসই/স্বাক্ষর দিয়ে চাল উত্তোলন করে আসছেন।
সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ হলে মেম্বাররা ঘরে ঘরে গিয়ে পুরাতন কার্ডগুলো বিতরণ করে। এরফলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন।অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রায় প্রতিটি সদস্যদের নাম রয়েছে সরকারি সুবিধাভোগী কোন না কোন নামের তালিকায়।
সরেজমিনে ১০টাকা কেজির চালের ১১৭৫জনের তালিকায় ৫৫জনের নাম ও ঠিকানা মোতাবেক গিয়ে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না গেলেও গত ৫বছর যাবত তাদের নামে এবং স্বাক্ষরে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে।
ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডে কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস না করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯জনের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। যারা কি-না ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত চাল উত্তোলন করেছেন।
সাবাই গ্রামের মুরশিদ বলেন, সাত্তার মেম্বার গতকাল এসে আমার হাতে ছবিবিহীন একটা কার্ড দিয়ে যায়। সেখানে দেখছি প্রায ৫বছর ধরে আমার নামে চাল উঠছে। অথচ আমি একবারও চাল তুলিনি। একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের অভিযোগ আমি স্বাক্ষর করতে পারি না। টিপসই দিই। অথচ ৫ বছর ধরে অন্য কেউ আমার নাম সই করে চাল তুলে খাচ্ছে।
নারায়ণপুর বাজারের ডিলার মিজানুর রহমান জানান,গ্রাহকের কার্ডগুলো সর্বশেষ মাত্র দুই-তিন মাস ছিল আমার কাছে। এর আগে কার কাছে দরিদ্রদের এই কার্ড ছিল আমি জানি না। খাদ্য অধিদফতর থেকে চাল আসলে দরিদ্ররা কার্ড নিয়ে আসলে আমি চাল ১০টা দরে বিক্রি করি। আমি আর কিছু বলতে পারবো না।
স্থানীয় সাত্তার মেম্বার জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তেঁতুলিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের কার্ড পার্শ্ববর্তী শংকরপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগমকে দিয়েছিলাম। গত ৪ বছর মনোয়ারা বেগমই এসব চাল উত্তোলন করেছে। তবে তিনি ভুল স্বীকার করে বলেন কয়েক দিন আগে আমি গিয়াস উদ্দিনের কার্ড মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে এনে গিয়াসকে ফেরত দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা কার্ডের কিছু অনিয়ম হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ভুল মানুষের হয়, ফেরেস্তার ভুল হয় না। তবে ওই সময় কার্ডগুলি সচিব বিতরণ করেছে। তবে কার্ডে বেশকিছু নাম, বাবার নাম ঠিকানায় কিছু ভুল হয়েছে। আমি সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছি। তিনি শেষ বারের মতো ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমাকে এবারের মতো পার করে নেন।
মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম মোবাইল ফোনে বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের লিখিত অভিযোগের প্রক্ষিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটির প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- রাণীনগরে বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটার পেটে [ প্রকাশকাল : ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- যশোরে চলছে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক [ প্রকাশকাল : ০১ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক্টর [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- শার্শায় বালু উত্তলনে পরিবেশ হুমকির মুখে [ প্রকাশকাল : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা [ প্রকাশকাল : ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০.৩০ পুর্বাহ্ন]
- জনবল সংকটে তজুমদ্দিনে বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা [ প্রকাশকাল : ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে আবাসিক মাস্টারপাড়া [ প্রকাশকাল : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রায়গঞ্জ পৌরসভায় নির্মিত ড্রেন বেড়েছে দুর্ভোগ [ প্রকাশকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- তজুমদ্দিনে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ [ প্রকাশকাল : ২২ আগস্ট ২০২৩ ০২.২৫ অপরাহ্ন]
- ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ এমটিএফই [ প্রকাশকাল : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম [ প্রকাশকাল : ১২ আগস্ট ২০২৩ ০২.০০ পুর্বাহ্ন]
- তজুমদ্দিন হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক ও করোনার টিকা [ প্রকাশকাল : ২৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে অবৈধ কারখানায় হুমকিতে জনজীবন [ প্রকাশকাল : ০৭ জুলাই ২০২৩ ১১.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে শিক্ষক যখন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা [ প্রকাশকাল : ০৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০৫ অপরাহ্ন]
- অস্তিত্ব সংকটে রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা বন্দর [ প্রকাশকাল : ০৩ জুলাই ২০২৩ ০১.১০ অপরাহ্ন]