তারিখ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভরা মৌসুমে মনপুরার মেঘনায় ইলিশের আকাল

ভরা মৌসুমে মনপুরার মেঘনায় ইলিশের আকাল, দাদনের দায়ে দিশেহারা জেলেরা
[ভালুকা ডট কম : ১০ জুলাই]
জ্যৈষ্ঠ শেষ হয়ে আষাঢ়েও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ। ভরা মৌসুমে দেখা দিয়েছে মনপুরার মেঘনা নদীতে ইলিশের আকাল। খরচ পুষিয়ে চাহিদা মতো ইলিশ ধরা না পড়ায় সকল প্রস্তুতি সেড়েও ঘাটে বাঁধা নৌকা। জাল বোঝাই করে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ইলিশ শিকারী জেলেরা। এদিকে আয় উপার্জন দুরে থাক- আড়তদারদের দাদনের দায়ে দিশেহারা  জেলেরা। মৌসুমের শেষ দিকে এসেও যদি জালে ইলিশ ধরা না পড়ে তাহলে মাঠে মারা পড়বেন এই উপকূলের আড়তদার, মাঝি, ব্যাপারী ও হাজার হাজার জেলেপরিবার।

জানা যায়, মূলত ইলিশকে কেন্দ্র সরগরম হয়ে ওঠে মনপুরার মৎস্য ঘাটগুলো। সচল হয়ে ওঠে অর্থনীতির চাঁকা। উপজেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য ঘাট হচ্ছে হাজীর হাট মৎস্য ঘাট, জনতা বাজার মৎস্য ঘাট, রামনেওয়াজ মৎস্য ঘাট, মাঝের ঘাটি মৎস্য ঘাট, রিজিরখাল মৎস্য ঘাট। এসব ঘাটে শত শত আড়তদার রয়েছেন। একেকজন আড়তদার ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় মাছধরা নৌকা মিলিয়ে কোটি কোটি টাকা পূঁজি খাটিয়ে বসে আসেন। =হাজীর হাট ঘাটের আড়তদার নিজাম হাওলাদার, বাবুল মাতাব্বর, মতিন হাজী, সেলিম ব্যাপারী, হাফেজ রহিম, মোস্তফা মিয়া, দুলাল জানান, বড় ইলিশ ধরা নৌকায় ১ কোটি, মাঝারী নৌকায় ৫০ লাখ ও ছোট নৌকায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পূঁজি খাটিয়েছেন। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ মেঘনায় ইলিশের সংকট দেখা দেয়ায় ছোট নৌকায় পূঁজি খাটাচ্ছেন বেশি। ছোট ছোট নৌকায় ১০/১২ লক্ষ টাকা পূজি খাটালেও মাঝিসহ জেলেদের জনপ্রতি ৫০/৬০ হাজার টাকা করে দাদন দেয়ায় খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি।

এবছর ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের আকাল থাকায় কোটি কোটি টাকা পূঁজি খাটিয়ে দিশেহারা আড়তদাররা। তাছাড়া ঢাকার আড়তদাদের কাছ থেকে মাছ বিক্রির শর্তে নিয়ে রেখেছেন আরো বড় ধরনের দাদন। পূর্বে যেখানে একেকজন স্থানীয় আড়তদার প্রতিদিন গড়ে ২০ টি মাছের ঝুঁড়ি ঢাকায় বিক্রির জন্য পাঠাতেন সেখানে বর্তমানে ১ টি ঝুঁড়ি পাঠানোই সম্ভব হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেঘনায় বছরের প্রতি মাসে দুটি করে জ্যো প্রতিফলিত হয়। একটি হচ্ছে পূর্ণিমার জ্যো ও অপরটি হচ্ছে অমাবশ্যার জ্যো। সকল জ্যো’তেই স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। এবং স্রােতও বাড়ে। জ্যো’তে মেঘনার পানি বৃদ্ধি ও স্রােত বৃদ্ধি পেলে উজানে সাগর থেকে ইলিশ মেঘনায় চলে আসে। তবে সামনে অমাবশ্যার চাঁদ দেখা গেলে ইলিশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশায় বুক বেধে আছেন জেলেরা।

তাছাড়াও নদীতে নৌকা বাইচ করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন তারা। চন্দ্র তারার প্রতি সচেতনভাবে নজর  রাখছেন প্রতিনিয়িত। প্রতি মাসের শেষ জ্যো’তে ইলিশ বৃদ্ধি পায় বলে ধারনা তাদের। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ জ্যো’তে পানি বৃদ্ধি পেলেও আষাঢ় মাসের শেষ জ্যো’তে পানি কমবে বলে জানান সচেতন জেলেরা।

এদিকে জ্যৈষ্ঠ মাসে মাস শিকারের মৌসুম শুরু হলেও আষাঢ় মাসে এসেও জেলেদের জালে ধরা দিচ্ছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। এতে উপজেলার বিভিন্ন ঘাটে বাঁধা রয়েছে হাজার হাজার মাছধরা নৌকা। এব্যাপারে জাহাঙ্গীর মাঝি, হানিফ মাঝি, সফিউল্লাহ মাঝি, সাইফুল মাঝি, কালাম মাঝি, কবির মাঝি, নিরব মাঝি, মালেক মাঝিসহ মেঘনায় ইলিশ শিকারী সুনামধন্য মাঝিরা জানান, ৯/১০ জনের নৌকায় প্রতিদিন ২ জোবায় বাইচ খরচ হয় ৭/৮ হাজার টাকা। কিন্তু কোন বাইচে ৩/৪ টি ইলিশ কোন বাইচে ৮/৯ টি ইলিশ ধরা পড়ে। যা বিক্রি করলে সর্বসাকুল্যে মহাজনি খরচ বাদ দিয়ে তাদের হাতে আসে মাত্র ৩/৪ হাজার টাকা। এতে ইঞ্জিনের তেল খরচ ও জেলেদের খাবার খরচ হয়ে যায় তারও বেশি। আশানুরুপ আয় না হওয়ায় সকল প্রস্তুতি থাকা সত্বেও তারা জাল বোঝাই করে নৌকা বেঁধে রেখেছেন ঘাটে। একদিকে আড়তদারদের দাদন পরিশোধের চিন্তা অপরদিকে পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা বলে জানান এসব মাঝিরা।

এমতাবস্থায় নৌকা বাইচ করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন জেলেরা। মুখিয়ে আছেন ইলিশ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে। কবে মিলবে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কবে হাসি ফুটবে জেলে, মাঝি, আরতদার, ব্যাপারীসহ ইলিশ সংশ্লিষ্টদের মুখে। সময় মতো জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পরলে থমকে যাবে হাজারো পরিবারের জীবিকার চাকা।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই